তরিকুল ইসলাম, রংপুর
শিক্ষা ও ঐতিহ্যের পীঠস্থান, উত্তরবঙ্গের কারমাইকেল কলেজ। এই বিদ্যাপীঠের সঙ্গে এক পরিবারের সুদীর্ঘ ও নিবিড় সম্পর্ক যেন শিক্ষানুরাগের এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি সেই সম্পর্কের এক বিরল ও হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যের অবতারণা হলো কলেজের আঙিনায়, যখন ৮০ বছর বয়সী এক জননী তাঁর অবসরে যাওয়া মেয়ের কর্মস্থল পরিদর্শনে এলেন।
বেগম রেজিয়া খাতুন, যাঁর পাচ ছেলে ও দুই মেয়ে কারমাইকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী। শুধু সন্তানরাই নন, তাঁর দুই পুত্রবধূও এই কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্রী। এমনকি তাঁর স্বামী, প্রয়াত মৎস্য কর্মকর্তা আফছার আলীও ছিলেন এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।
এর বাইরেও, রেজিয়া খাতুনের মেয়ের জামাই জনাব রকিবুস সুলতান মানিকও ৮০ দশকে কারমাইকেল কলেজে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)’ র সর্বোচ্চ পদ প্রথম ক্যাডেট আন্ডার অফিসার( সিইউও) পদে দায়িত্ব পালন সহ কলেজ ছাত্র সংসদের নাট্য ও কমনরুম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি কারমাইকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও কারমাইকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই পরিবারের সদস্যরা কারমাইকেল কলেজের আলোয় আলোকিত হয়েছেন, যা সত্যিই এক বিরল দৃষ্টান্ত।
এই পরিবারেরই গর্বিত সদস্য, প্রফেসর ড. রেহেনা খাতুন, যিনি কারমাইকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে অত্যন্ত অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৩ মার্চ, ২০২৫ তারিখে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অবসরে যাওয়ার ঠিক একদিন আগে, অর্থাৎ ২ মার্চ, ২০২৫ তারিখে, ড. রেহেনা খাতুন এক অসাধারণ উদ্যোগ নেন। তিনি তাঁর ৮০ বছর বয়সী মা, বেগম রেজিয়া খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে আসেন তাঁদের সকলের প্রাণপ্রিয় শিক্ষাঙ্গন কারমাইকেল কলেজে।
এই দিন মা-মেয়ে মিলে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন। প্রতিটি কোণায় হয়তো বেগম রেজিয়া খাতুন খুঁজে পাচ্ছিলেন তাঁর সন্তানদের পদচিহ্ন, তাদের সোনালি অতীতের স্মৃতি।
পরিদর্শন শেষে, ড. রেহেনা খাতুন তাঁর মাকে নিজের উপাধ্যক্ষের আসনে বসতে অনুরোধ করেন। প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও, মেয়ের নাছোড়বান্দা অনুরোধে বেগম রেজিয়া খাতুন সেই আসনে বসেন। এ যেন ছিল এক সার্থক মেয়ের তার গর্ভধারিণী মাকে দেওয়া এক বিরল সম্মান, এক অসাধারণ শ্রদ্ধাঞ্জলি। ছোটবেলা থেকে সব ভাইবোনদের লেখাপড়ায় হাতে খড়ি মায়ের কাছে। একটানা ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের পাশাপাশি এই মা’ই সকলকে পড়াশুনায় সহযোগিতা করেছেন।মায়ের শিক্ষানুরাগ ও ত্যাগের প্রতি মেয়ের এমন গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ উপস্থিত সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
এই ঘটনা কেবল একটি পরিবারের গল্প নয়, এটি শিক্ষানুরাগ, ঐতিহ্য এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের ধারাবাহিকতার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। কারমাইকেল কলেজের ইতিহাসে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।
https://slotbet.online/