চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় দিন দুপুরে ৭টি ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ ও লাকড়ি। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিন দুপুরে ৭টি ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ ও লাকড়ি। সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে এসব কাঠ ও লাকড়ি সংগ্রহ করায় হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশও।
আবার এসব ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমি কিংবা পাহাড়ের মাটি। এসব ইটভাটার নেই কোন লাইসেন্স। অনিয়মের উপর ভর করেই চলছে এসব ইটভাটার কার্যক্রম। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট আইন ও শাস্তি থাকলেও আইনের প্রয়োগ খুব একটা নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালীতে ১২ টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সব ইটভাটাই অবৈধ। উপজেলার সাধনপুর লটমনিতে ৪টি, বাহারছড়ার ইলশা ও রত্নপুর এলাকায় ৫টি, সরল, চাম্বল, শেখেরখীল ও পুকুরিয়া ইউপিতে একটি করে ১২ টি ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমাসহ নানান জটিলতার কারণে ৫টি বন্ধ থাকলেও বাকী সাতটি ইটভাটায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ।
ফলে আশপাশের পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। প্রতি বছর অভিযান পরিচালনা করে নামমাত্র জরিমানা করা হলেও এসব অবৈধ ইটভাটা থাকে বহাল তবিয়তে। কোন কোন ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও তা অদৃশ্য ক্ষমতাবলে আবারও গড়ে উঠে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশখালীর চাম্বল এনটিবি ব্রিকস, সরল চৌধুরী ব্রিকস, বাহারছড়া এমবিএম ব্রিকস, চৌধুরী ব্রিকস ও জিবিএম ব্রিকসে পোড়ানোর জন্য হাজারও মন কাঠ স্তুপ করে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকটি ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ব্রিক ফিল্ড কর্মরত শ্রমিকরা জানান, একবার ইট পোড়াতে প্রায় চার হাজার মণ কাঠ পোড়াতে হয়। এসব কাঠ জোগাড় হচ্ছে আশপাশের সংরক্ষিত বন থেকেই। যার ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। এতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়ছে।
পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ইট ভাটা গুলোতে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে কাঠ পোড়ানো হলেও তা নিয়ে কারও যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। অন্য দিকে প্রশাসনের দাবী তারা প্রত্যকটি ইটভাটায় নোটিশ দিয়েছেন ইটভাটা বন্ধ রাখার জন্য। তবে কে শুনে কার কথা। শুধু বাহারছড়ায় নয়, চাম্বল, সরলে, সাধনপুর ও পুকুরিয়াতে এভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে লোকালয় ও ফসলি জমিতে অনেক ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। ইট ভাটা গুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে সরল চৌধুরী ব্রিকস এর ম্যানেজার মো. মুফিজ বলেন, কয়লার সংকটের কারণে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইটভাটা বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে কোন ধরনের কোন নোটিশ আসেনি।
তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবী যে সমস্ত ইটভাটায় লাইসেন্স নাই সব বন্ধ রাখার জন্য, এ ব্যাপারে চাম্বল (এনটিভি) ইট ভাটার মালিক আলী নেওয়াজ চৌধুরী ইরান ও সরল চৌধুরী ব্রিকস এর মালিক মাষ্টার সাইফুদ্দিনের সাথে মুটোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন রিসিভ করেন নি। জলদী অভয়ারণ্যে রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ইট ভাটা গুলোতে পাহাড় কাটা ও কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণভাবে নিষেধ রয়েছে। অবৈধ ইটভাটা ও করাত কল গিলে খাচ্ছে বন। যে সমস্ত ইট ভাটা পরিবেশবান্ধব নিয়ম না মেনে পাহাড়ি মাটি বা কাঠ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
https://slotbet.online/