শরীফ আহমেদ স্টাফ রিপোর্টার:
খাদ্যশষ্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিল অধুষ্যিত এলাকায় সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ইরি-বোরো ধানের মৌসুমকে সামনে রেখে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ও ১ টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ফসলী মাঠে কৃষকরা বোরো ধানের চারার জন্য বীজতলা প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২২৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১৩৪০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরীও হয়েছে। এক হেক্টর বীজতলা থেকে ১৭ হেক্টর জমি রোপন করা যায়।
রানীদিঘী গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, ভালো চারা পেতে চাইলে অবশ্যই ভালো বীজতলা তৈরী করতে হবে। তাই কৃষকরা বীজতলা নিয়ে কাজ করছেন নিরলস ভাবে। তিনি আরো বলেন মূলতঃ অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাস বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়। বীজতলায় পর্যাপ্ত রোদ পড়েবে, এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করা হয়। চাষের আগে জৈবসার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হয়। পানি দিয়ে জমিকে থক থকে কাদা করে, জমির চওড়া এবং দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে ভেজা বীজতলা তৈরি করা হয়। বীজ বপন করার আগে ৪৮-৭২ ঘণ্টা ধান ভালো ভাবে জাগ দিয়ে রাখতে হয় এসময় ধানের অঙ্কুর গজাবে।
অপরদিকে ধানকুন্টি গ্রামের কৃষক মতিন বলেন, অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হয়। বোরো ধানের বীজতলার অতিরিক্ত ঠান্ডায় চারা যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য কৃষকরা রাতের বেলা চারার উপরে সাদা পলিথিন দিয়ে বা কলার পাতা দিয়ে ছাউনির মতো করে ঢেকে দেয়, যাতে করে চারা নষ্ট না হয়। পরের দিন সকালে রোদ দেখা দিলে বীজ তলায় রোদ লাগার জন্য পলিথিন বা কলার পাতার ছাউনি আবার সরিয়ে রাখতে হবে। কৃষকরা প্রতিদিন সকালে বীজতলা একবার করে দেখে আসেন, কারণ বীজতলার চারা যাতে হলুদ ও পাতা ঝলসানো রোগে আক্রমণাত্মক না হয়। এছাড়াও কৃষকরা চারায় প্রয়োজন মতো ইউরিয়া ও জিপসাম সার দিয়ে থাকে। কৃষকেরা বীজতলা থেকে চারা উঠানোর এক সপ্তাহ আগে কীটনাশক দিয়ে থাকে। এতে বীজতলার চারা পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। সগুনা ইউনিয়নের মাকোড়শোন গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর আগের তুলনায় কম পরিমাণ জমিতে বোরো ধান চাষ করবো। তেল, সার, কিটনাষক সহ সকল কৃষি পন্যের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ধান চাষ খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। আবার এই অঞ্চলের বেশীর ভাগ কৃষকই বর্গা চাষী, যাদের নিজের জমি নেই তাই তারা লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে থাকে। এমনিতেই যে টাকা খরচ করে ধানের চাষ করা হয় ধান বিক্রয় করে সে টাকা আয় হয় না। কেননা কৃষি শ্রমিকের সংকট সহ ফসলী মাঠে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা কারনে জমি পরিস্কার করতে অনেক টাকা খরচ।
এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিগত বছর গুলোতে এ উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এ বছর মাঠে পানি ছিল না, আবার সরিষা চাষ হয়েছে প্রায় ১১০০০ হাজার হেক্টর, এই সমস্ত জমিও বোরো চাষের অন্তরভুক্ত হবে। আর কিছু দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষাও ভালো হবে, আবার বোরো ধানে চাষের লক্ষ মাত্রাও অতিক্রম করবে বলে আশা করছি।
https://slotbet.online/