কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে কামাত আঙ্গারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, জালিয়াতি, শিক্ষকদের হয়রানি, সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ, মাদরাসার গাছ কেটে নিজের কাজে লাগানোসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তিনি এখনও বহাল তবিয়তে। এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্বেগ হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন সুপারের খুঁটির জোড় কোথায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ২২ বছর অফিস সহকারী পদে চাকরি করার পর জালিয়াতি করে ২০২৪ সালের গত আগস্ট মাসে অফিস সহকারী সফিয়ার রহমানকে এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক দেখিয়ে নতুন করে এমপিও ভুক্ত করেন সুপার। অথচ অফিস সহকারী পদে ২০০২ সালে নিয়োগ পান সফিয়ার রহমান এবং ২০১৪ সালের জুলাই মাসে উচ্চতরস্কেল প্রাপ্ত হন। এদিকে অফিস সহকারী পদ শূন্য দেখিয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এমপিও ভুক্তির শর্তকে লঙ্ঘন করে উক্ত পদে খালেদুজ্জামানকে নিয়োগ দেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মাদ্রাসার সুপার ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে তার আপন ভাতিজা মোস্তাফিজুর রহমানকে সহকারী মৌলভী পদে নিয়োগ দেন। নিয়োগ বিধিমালায় নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক হলেও উক্ত ব্যক্তির কোনো নিবন্ধন সনদ নেই। সুপার অনলাইনে সার্চ দিয়ে একই নামীয় অন্য ব্যক্তির নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে বিপুল অর্থের বিনিময়ে এমপিওভুক্তি করান।
এদিকে মাদরাসার কর্মচারী মজিবর রহমানের জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম তারিখ ভুল থাকায় এম.পিও কপিতে বেতন ভাতা আসলেও নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে একতরফা সিদ্ধান্তে গত প্রায় ৮ মাস থেকে তা স্থগিত করে রেখেছেন। এছাড়াও উক্ত কর্মচারীর চাকরী জীবনের ২২ বছর অতিক্রান্ত হলেও সুপার উচ্চতর স্কেল থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ হাতিয়ে নেন। স্বেচ্ছাচারীতা এবং স্থানীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে শিক্ষক, কর্মচারীদের মাসিক বেতন ও উচ্চতর স্কেলের রেজুলেশনে স্বাক্ষর দেয়ার সময়ে টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে বেতন ভাতা বন্ধ রেখে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হুমকি প্রদান করেন। উক্ত মাদরাসার সুপার সাঈদুর রহমান ভূরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রী কলেজে প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা) পদেও বর্তমানে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং একইসাথে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এসব অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তদন্তাধীন রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এসব অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করার কথা। এ সুযোগে সুপার ইউএনওর কার্যালয়ে গিয়ে ইউএনওকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় ইউএনও ক্ষিপ্ত হলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস সুপারের নামে থানায় একটি জিডি করেন। পরবর্তীতে সুপারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলেও অদৃশ্য কারনে তিনি এখনো বহাল তবিয়তে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক জানান, গত ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার ভূরুঙ্গামারীর গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ম্যানেজিং কমিটির কমিটির উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে সুপারকে সমস্ত বিষয় সমাধানের জন্য মৌখিক ভাবে একমাস সময় প্রদান করেছেন।
ওই এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, মাদ্রাসা সুপারের বিশেষ তদবিরের কারনে বিষয়টি নিয়ে কালক্ষেপন করা হচ্ছে। তারা দূর্ণীতিবাজ সুপারের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, একটি মহল উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
https://slotbet.online/