যমুনা নদীর পানি ৪ সেমি কমে বিপদসীমার ৫৭ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যায় যমুনা পাড়ের ৫ উপজেলার ৩৪ ইউনিয়নের বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে খাদ্য, অর্থ ও ওষুধ এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বসতবাড়ী রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলেও চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিতরা।সারাক্ষন পানিতে থাকায় হাত-পায়ে ঘাসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। চুলা তলিয়ে যাওয়ায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ল্যাট্টিন তলিয়ে যাওয়ায় বাথরুমের চরম সম্যসা দেখা দিয়েছে। শিশুদের শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। সহ¯্রাধিক তাঁত কারখানা তলিয়ে যাওয়ায় মালিক ও শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধিতে যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন মানুষ ফসল ও বসতভিটা হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে। বন্যার কারনে জেলায় প্রায় ৭৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চরম ব্যাঘাত ঘটছে। অন্যদিকে সদর, কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় প্রতিদিন বসতভিটা ও ফসলী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের ধনী ব্যক্তি মুহুর্তে ফকির হয়ে যাচ্ছে।
ওয়াপদা বাঁধ এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মুহুর্তের মধ্যে বন্যার পানি ঢূকে ঘরের আসবাবপত্রসহ কিছু নস্ট করে দিয়েছে। কোন রকমে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। পোলাপানসহ নারীরা সারাক্ষন পানি থাকায় ঘা-পচড়াসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। কাজকর্ম না থাকায় কস্টে দিনযাপন করছি। ওষুধ কিনতে পারছি না।
চায়না বাঁধের আসমা খাতুন জানান, বসতভিটা, টিউবওয়েল ও রান্নার চুলা তলিয়ে গেছে। বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। টিউবওয়েল ও ল্যাট্টিন না থাকায় খুব সমস্যা রয়েছি।
বাঐতারা গ্রামের হযরত আলী জানান, বাড়ীসহ চারপাশে আশপাশে পানি থৈথৈ করছে। চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের কৃষক হাফিজ উদ্দিন জানান, আউশ, আমন ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় চরম ক্ষতি হচ্ছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী জানান, যমুনার ভাঙ্গনে কাওয়াকোলা ইউনিয়ন বিলীনের পথে। ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। চরাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় নেয়ার স্থানও নেই। গবাদি পশু নিয়ে চরের মানুষ বিপাকে পড়েছে। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে ইউনিয়নের সকল মানুষ চরম কস্টে দিনযাপন করছে।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সুত্রধর জানান, বন্যার কারনে ৫টি উপজেলার সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির পাট, সবজি, আউশসহ কৃষকের নানা ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মধ্যে চাল ও শুকনো খাবার বিতরন শুরু হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি ধীরগতিতে গতিতে কমছে। ১৮ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২ সে.মি পানি কমেছে। ভাঙ্গনরোধে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙ্গনরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে চরাঞ্চল ভাঙ্গনে প্রকল্প না থাকায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
https://slotbet.online/