সহজ সরল হিন্দু সম্প্রদায়। মুদির দোকানই একমাত্র ভরসা। খুড়ে খুড়ে চলছিল মুদি দোকানটি। দেনা পাওনাকে কেন্দ্র করে মুদি দোকান ভাংচুর, উচ্ছেদ করার হুমকি ধামকি ও হাট কমিটি কর্তৃক উচ্ছেদের নোটিশ পেয়েই স্ট্রোক করেছে এক হিন্দু ব্যক্তি। হাট ইজারাদার ও হাট কমিটির লোকজন উচ্চ স্বরে দোকান ভাংচুর, মারপিট ও উচ্ছেদ হুমকি ধামকির সহ্য না করতে পেরে তাৎক্ষণিক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। অসুস্থ্য হওয়ার সাথে সাথে হাট কমিটি কর্তৃক উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করায় স্ট্রোক করে মারা যায় এক হিন্দু দোকানদার। স্ট্রোক করার পর স্থানীয় দোকানদাররা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জ বেলকুচি উপজেলার রান্ধুনীবাড়ি হাটে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বেলকুচির রান্ধুনীবাড়ি হাটে বাচ্চু পোদ্দার এর পুত্র অজিত পোদ্দার (৫০) এর ছোট্ট একটি মুদির দোকান আছে। যে দোকানে মেঝেতে বসে দোকানদারি কে দুইজন ছেলে ও ৩ মেয়েকে মানুষ করেছে অজিত পোদ্দার। বেশকিছু দিন পূর্বে অজিত পোদ্দার এর টাঙ্গাইলের এক আত্মীয় স্থানীয় এক ব্যক্তির নিকট থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে। মুদি দোকানকে উচ্ছেদ করার লক্ষেই ৬৫ হাজার টাকা ঋণকে কেন্দ্র করে অজিত পোদ্দারের সাথে সালিশী বৈঠক করেন হাট ইজারাদার জহুরুল হাজী ও রহমান হাজী। সালিশী বৈঠক অনুযায়ী অজিত পোদ্দার এর আত্মীয়’র ৬৫ হাজার টাকার মধ্যে (২৩ জুন ২০২৪) তারিখে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে করে মাফ চেয়ে আসে অজিত পোদ্দার। কিন্তু হাট ইজারাদার জহুরুল হাজী ও রহমান হাজী দোকান উচ্ছেদ এর লক্ষ্যেই বাকী ১৫ হাজার টাকার জন্য (২৪ জুন ২০২৪ইং) তারিখে সকাল ১০টার দিকে অজিত পোদ্দারকে ব্যাপকভাবে চাপ প্রয়োগ করে। হাট ইজারাদার জহুরুল হাজী ও রহমান হাজী ১৫ হাজার টাকা না দিলে দোকান উচ্ছেদ, ভাংচুর ও মারপিট করার ঘোষনা দেয়। জহুরুল হাজী ও রহমান হাজী এর ভয়ভীতি, ধমকে তাৎক্ষণিক দোকানের মধ্যেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ে অজিত পোদ্দার।
অজিত পোদ্দার অসুস্থ্য হওয়ার ৩০ মিনিট পরে দোকান উচ্ছেদের নোটিশ প্রদান করে ইজারাদাররা। নোটিশ পাওয়ার সাথে সাথে অজিত পোদ্দার স্ট্রোক করে। স্থানীয় দোকানদার অজিত পোদ্দারকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে।
এদিকে অজিত পোদ্দারকে বিকেল ২টার দিকে দ্রুত সৎকার করতে চাপ প্রয়োগ করে ইজারাদারা। বিকেল ৪টার দিকে অজিত পোদ্দার এর ছেলে গণেশ পোদ্দার হাট ইজারাদার জহুরুল হাজী ও রহমান হাজী এর ভয়ে দ্রুত সৎকার করার জন্য মাইঝাইল শশ্মানে নিয়ে যায়। ৪টা থেকে শুরু হয় অজিত পোদ্দার এর সৎকারের কাজ।
অজিত পোদ্দার এর ছেলে গণেশ পোদ্দার কান্না কণ্ঠে বলেন, হাট ইজারাদার জহুরুল হাজী ও রহমান হাজী সহ তার লোকজনরা আমাদের দোকান উচ্ছেদ করার জন্য এসেছিল। তাদের ভয়েই আমার বাবা স্ট্রোক করেছে। আমি প্রশাসনের নিকট বিচার চাই।
রান্ধবীবাড়ি হাট ইজারাদার জহুরুল হাজী ও রহমান হাজী বলেন, আমরা হাট ইজারাদার। আমাদের নিকট অনেকেই বিচার চাইতে আসে। বিচারে ২৩ জুন ২০২৪ইং তারিখে অজিত পোদ্দার ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকী ১৫ হাজার টাকা কবে দিবে, সেই বিষয়ে কথা বলেছি। কোন ভয়ভীতি প্রদর্শন করেনি। আর শুধু অজিত পোদ্দারকে নয়, ১২টি দোকান উচ্ছেদ করতে আমরা আজকে নোটিশ প্রদান করেছি। নোটিশ প্রদান করার জানতে পারলাম অজিত পোদ্দার স্ট্রোক করে মারা গেছে।
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ বলেন, এবিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ বা কেউ মোবাইল ফোনে অভিযোগ দাখিল করেনি। তাই কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না।
https://slotbet.online/