মামলা তুলে নিতে হত্যা হুমকিসহ নিজেদের মাথা কেটে উল্টো মিথ্যা ও সাজানো মামলার পায়তারা আসামীদের
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল ঘোরজান এলাকায় পুর্বশত্রুতার জের ধরে একদল কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবু বক্কার (২৮) নামে এক কৃষককে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ও রড- হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে। এতে ওই কৃষকের মাথা ফেটে অন্তত ৬টি সেলাই পড়েছে। এমনকি সন্ত্রাসীদের হাতুরী ও রডের আঘাতে দুহাত থেতলে গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ৬ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে বাড়ীতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহত আবু বক্কার ঘোরজান ইউপির বালিয়াকান্দি গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। এ ঘটনায় ওই কৃষকের বড় ভাই বাবলু বাদী হয়ে সন্ত্রাসী ৯জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তীতে মামলাটি চৌহালী থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় গত বুধবার আসামীরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত ৮জনের জামিন মঞ্জুর করলেও মামলার এক নম্বর আসামী চরাঞ্চলের কুখ্যাত ডাকাত নুরুন্নবীর জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরন করেন। মামলার ৮জন আসামী জামিন পেয়েই বাদীসহ তার পরিবারের লোকজনকে মামলা তুলে নিতে নানা ধরনের হুমকি প্রদান করছেন। এমনকি মামলা না তুললে আহত কৃষকের ভাই মামলার বাদী বাবলু ও আলমগীরকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়াও মামলার বাদীসহ আহতদের ফাঁসাতে কুখ্যাত ডাকাত নুরুন্নবী গ্রুপ নিজেদের কারো মাথা কেটে বাদীদের বিরুদ্ধে সাজানো মিথ্যা মামলা দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এতে বাদীরা ভয়ভীতির মধ্যে দিনপার করছে। এ অবস্থায় অসহায় বাদীপক্ষ কুখ্যাত চরাঞ্চলের ডাকাত নুরুন্নবীর বাহিনীর হাত থেকে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
মামলা সুত্রে জানা যায়, ৩১ মে বিকেলে ঘোরজান আবু বক্কার তার বড় ভাই মামলার বাদী বাবলু দুজনে স’মিলে বসেছিল। এ সময় হঠাৎ বালিয়াকান্দি গ্রামের সাহেব উদ্দিনের ছেলে চরাঞ্চলের কুখ্যাত ডাকাত নুরুন্নবীর নেৃত্বতে বালিয়াকন্দি গ্রামের দেলবার (৩২), ঘোরজান এলাকার বাসিন্দা আলম ব্যাপারীর ছেলে হামেদ (৪৮), বালিয়কান্দি এলাকার মফিজ উদ্দিনের ছেলে সাহেব উদ্দিন, ঘোরজান এলাকার আলম ব্যাপারীর ছেলের আলী জিন্দার (২৮), রাসেল (২৫), আবু সফিয়ান, মৃত মফিজের ছেলে আলম ব্যাপারী ও বালিয়া কান্দি দেলবারের স্ত্রী জয়নব খাতুন দেশীয় অস্ত্র রামদা, লোহার রড ও হাতুরী নিয়ে বাবলুর উপর প্রথমে হামলা চালায়। এ সময় বাবলুকে বাঁচাতে তার ছোট ভাই আবু বক্কার এগিয়ে আসলে আব্দুল হামেদের নির্দেশে কুখ্যাত ডাকাত নুরুন্নবী হাতে থাকা রামদা দারা আবু বক্কারকে হত্যার জন্য মাথায় সজোরে কোপ দেয়। এছাড়াও অন্যান্য আসামীরা রড ও হাতুড়ী দিয়ে আবু বক্কারের দুহাতে উপর্যপরি আঘাত করে। এতে আবু বক্কারের মাথা ফেটে যায় এবং দুই হাত থেতলে যায়। পরবর্তীতে গুরুত্বর অবস্থায় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের চিকিৎস আবু বক্কারের মাথায় ৬টি সেলাই দেন এবং তার দুহাতের আঙ্গুলসহ বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যাওয়ায় দুহাত প্লাষ্টার ব্যান্ডেজ করে দেন। সারা শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে ৬দিন চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। পরে একটু সুস্থ হলে এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে তাকে হাসপাতাল থেক বাড়ীতে নেয়া হয়েছে।
আহত আবু বক্কারের ভাই বাবলু জানান, বর্তমানে আবু বক্কার বাড়ীতে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। দুইহাত ভেঙ্গে যাওয়ায় সম্পুর্ন অকেজো রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুটি গ্রিব্রিয়াস মেডিকেল সনদও দিয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৯জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করা হলে পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আহত আবু বক্কারের আরেক ভাই আলমগীর হোসেন জানান, মামলা দায়েরের পর থেকেই কুখ্যাত ডাকাত নুরুন্নবী বাহিনী মামলা তুলে নেয়ার জন্য অব্যাহত হুমকি দিচ্ছিল। এ অবস্থায় গত বুধবার ৯জন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত ৮জনকে জামিন প্রদান করেন এবং কুখ্যাত ডাকাত নুরুন্নবীর জামিন বাতিল করে তাকে জেলহাজতে প্রেরন করেছে। নুরুন্নবীর জামিন বাতিল হবার পর থেকেই নুরুন্নবীর অন্যান্য স্বজন ও মামলার আসামীরা এলাকায় গিয়ে মামলার বাদী বাবলু এবং আমাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি প্রদান করছে। মামলা তুলে না নিলে আমাদেরক ফের মারপিট ও হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি আমাদেরকে হেনস্তা করার জন্য নিজেদের মাথা নিজেরা ফাটিয়ে বা মাথা কেটে হাসপাতাল থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা-সাজানো মামলা করবে বলেও নানা জনের মাধ্যমে হুমকি প্রদান করছে। এছাড়াও কুখ্যাত ডাকাত নুরুন্নবী জামিন থেকে বের হয়ে আমাদেরকে হত্যা করবে বলে তার স্বজনরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় নুরুন্নবী বাহিনীর হত্যা-মারপিটের হুমকি অন্যদিকে তাদের সাজানো মিথ্যা মামলার ভয়ে তটস্থ রয়েছি। আহত আবু বক্কার, মামলার বাদী ও তার ভাই বাবলু ও আলমগীর হোসেন নুরুন্নবী বাহিনীর হাত থেকে হত্যা ও মিথ্যা মামলার হুমকি থেকে বাঁচতে প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আবু তাহের সরদার জানান, মামলাটি তদন্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি সত্য। চার্জশীট তৈরী করা হচ্ছে। আসামীপক্ষ মিথ্যা মামলার বিষয়ে বলেন, তারা মিথ্যা মামলা করতে চেয়েছে। আমি বলেছি মামলা করে লাভ হবে না।
এ বিষয়ে চৌহালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দত্ত জানান, বাদী ও তার পরিবারকে হত্যাসহ নানা ধরনের হুমকির মৌখিক অভিযোগ পাবার পর পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তিনি বাদী ও স্বজনদের হুমকি বিষয়ে জিডি করার পরামর্শ দিয়েছেন। জিডি করলে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
https://slotbet.online/