রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার ভাইরাল হওয়া ওই ব্যক্তির নাম আবদুল কুদ্দুস মাখন।মাখনের বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা এলাকায়। ছোট থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে আছেন। স্থানীয় সাবেক এমপি মতিয়া চৌধুরীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক শাপে নেউলে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগের শাসনামলে জেলও খাটতে হয়েছে তাকে। তার বাড়ি নকলা হলেও থাকতেন ময়মনসিংহে। অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল তার।
আবদুল কুদ্দুস মাখন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বাড়ি থেকে বারবার নিষেধ করেছে পরিবারের লোকজন তবুও মনের টানে গিয়েছিলাম। আমি প্রতিবছর শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডি ৩২-এ তার বাসভবনে যাই। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আমি মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ সংলগ্ন ভাড়া বাসা থেকে ওইখানে যাই। কিন্ত পথেই নিউ মার্কেট ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে আমাকে সিএনজি থেকে নামানো হয়। তারপর যা হলো দেখেছেন। আমি পদ পদবি ছাড়া, বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক। দেশের এই অবস্থাতেও শুধু হৃদয়ের টানেই সেখানে গিয়েছিলাম ধ্বংসাবশেষ দেখতে আর সুযোগ পেলে শ্রদ্ধা জানাতে।
ঘটনার পর মাখন মারা গেছেন এমন গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। পরে তার বড় ছেলে ফেসবুক পোস্টে লিখেন, আমার বাবা মারা যায়নি, এটা গুজব। তাকে বেঁধে বেধড়ক পিটিয়ে তার মোবাইল ও সব টাকা নিয়ে গেছে। বাসায় তার চিকিৎসা চলছে।
বড় ছেলে আরও লিখেন, এখন আপনাদের যদি মনে হয় তাকে মেরে ফেলবেন তাহলে বাসায় আসতে পারেন। আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতে পারেন। আমাদের পরিবারের সবাই মরার জন্য প্রস্তুত। তার অপরাধ কি ছিল জানেন? স্বাধীনতার সময় তার, তার বাবা ও তার বোনের অংশগ্রহণ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে মিথ্যা মামলায় ৭ মাস ২৪ দিন জেল খাটা, তার অন্য অপরাধ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাওয়া, কালো পাঞ্জাবি পরিধান করা এবং বাংলাদেশের পতাকার টুপি পরিধান করা (একটা কথা আপনাদের অবগতির জন্য বলে রাখা ভালো উনার মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য উনি কখনো চেষ্টাই করেন নাই, কারণ আমার বাবা সার্টিফিকেটের জন্য অংশগ্রহণ করেন নাই)। এই যদি তার অপরাধ হয় তাহলে রাষ্ট্র আমাদের পুরো পরিবারকে ফাঁসি দিতে পারেন।’
তিনি আরও লিখেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে এই জঘন্য কাজের পরও আমাদের দেশের মানুষ থেমে যায়নি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। আমার মেজো চাচাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাকে জবাই করবে। এই সমাজ বা রাষ্ট্রের কাছে আর বিচার চাওয়ার কিছু নেই। লাভও হবে না। বাঙালি জাতি হিসেবে নিজেকে হয়ত কখনো পরিচয় দিতে পারব না। যারা আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন, আব্বা কিছুটা সুস্থ হলে আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেব। তবে অন্য কারও বাবার সঙ্গে যেন এমন অন্যায় না হয় আপনাদের কাছে এই অনুরোধ রইলো। আমার বাবার মতো অনেকেই আছেন যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন, কারণ তারা ৭১ দেখেছেন। এই অপরাধের জন্য দয়া করে আর কাউকে লাঞ্ছিত করবেন না প্লিজ।’
আবদুল কুদ্দুস মাখন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশার সঙ্গে রাজনীতি করতেন। এলাকার রাজনীতিতে মতিয়া-বাদশা দ্বন্দ্বে বেশ কয়েকবার মাখন ভিকটিম হয়েছেন। ফেনসিডিল ও জাল টাকার মামলা খেয়ে জেল খেটেছেন। মতিয়া জামানায় নিজ বাড়ি নকলাতেও তেমন আসতে পারতেন না।
তিনি পোষাক পরিচ্ছেদে আপাদ মস্তক আওয়ামী লীগকে ধারণ করেন। এলাকায় তাকে নাম না ধরে আওয়ামী লীগ বললেই সবাই চিনে।
এলাকাবাসির দাবি, মাখন মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত ছিলেন। একটা মুক্তিযোদ্ধের সার্টিফিকেট
ের জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্থানীয় নিজ দলের নেতাদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে পাননি।
সরকার পতন আন্দোলনের আগে থেকে গতকাল পর্যন্ত তার ফেসবুকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার নানা ভিডিও-ছবি তিনি পোস্ট করেছেন। সরকার পতনের পর আন্দোলনকারীদের সমালোচনা, সত্য-মিথ্যা হিন্দু নির্যাতন, ৩২ নম্বরসহ নানা ঘটনার আক্রমণাত্মক পোস্ট তার ফেসবুক জুড়ে ছিল। দু’দিন আগে আওয়ামী লীগের এই দুর্দিনে মতিয়ার নীরবতা নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেন।মতিয়ার দিক আঙ্গুল তুলে তিনি লিখেছেন, তিনি আওয়ামী নন বামের নেত্রী।
https://slotbet.online/