মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম চট্টগ্রাম বাঁশখালী প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব কোকদন্ডী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইদ্রিস বাদশাহ অসুস্থ মাকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজ পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।
মাকে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ভাই-বোন দু’জনই গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ—দুর্ঘটনার জন্য দায়ী আনোয়ারা থানার অন্তর্গত কালাবিবির মোড় এলাকায় অবস্থিত জেসি ফুড প্রোডাক্টস লিঃ নামের একটি কোম্পানির গাড়ি হলেও ঘটনা হওয়ার ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো খোঁজ খবর বা আহতদের পাশে দাঁড়ায়নি জেসি ফুড প্রোডাক্টস লিঃ নামের কোম্পানির মালিকপক্ষ।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, অসুস্থ মাকে নিয়ে দুই ভাই-বোন গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে ডাক্তার দেখাতে আসেন। চিকিৎসা শেষে ফেরার পথে মজ্জ্যারটেক থেকে একটি গ্রামীণ সিএনজি (ড্রাইভারের নাম রিফাত ও মালিকের নাম লোকমান) ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু পুকুরিয়া ইউনিয়নের পুরাতন ঘাটঘর এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ করেই জেসি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির একটি গাড়ি তাদের সিএনজিকে চাপা দেয়।
এ সময় নুর জাহান(৩৫) নামের যাত্রীর ডান শরীর থেকে আলাদা হয়ে রাস্তার এক পাশে পড়ে যায়, যাহা স্থানীয় ইব্রাহিম নামের এক লোক শরীর থেকে আলাদা হওয়া হাতটি হাতে নিয়ে যাচ্ছে সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই সাথে সিএনজির পিছনে থাকা তিন জনেই গুরুতর আহত হন এবং নুরজাহানের এক হাত সম্পূর্ণ ভাবে হারান এবং ডান পায়ের রান বরাবর গাড়ির চাকা যাওয়ার দরুন ঐ পা টাও এখন হারানোর মতো অবস্থা। নুর জাহানের ভাই বাদশাহ নামের যাত্রীটিও একটি পায়ে গুরুতর আঘাত পান। চোখের সামনে অসুস্থ মা ও বোনকে রক্ষার আকুতি জানালেও কিছু করার সুযোগ পাননি তারা। দুর্ঘটনার পরপরই জেসি ফ্রুটস কোম্পানির গাড়িটি দ্রুত পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু গুরুতর আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন দিন মজুর ফরিদ এর স্ত্রী নুর জাহানের পরিবার।
আহত নারীর স্বামী, যিনি পেশায় কৃষি শ্রমিক ও দিন মজুর ফরিদ, জানান—“দিনমজুরির টাকায় সংসার চলে, এখন স্ত্রী নুর জাহানের চিকিৎসা একা বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।” তিনি সরকারি সহায়তা ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষ কেউ ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি। বিষয়টি জানতে আনোয়ারা কালাবিবির দিঘি সংলগ্ন জেসি ফ্রুটস কোম্পানিতে গেলে মালিককে পাওয়া যায়নি। ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলে তারা দায় এড়িয়ে একে অপরকে দেখিয়ে দেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়দের দাবি, জেসি ফ্রুটস কোম্পানির গাড়িগুলো দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে। এর আগেও ছোটখাটো দুর্ঘটনার অভিযোগ উঠেছে, তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা বলেন—“মানুষ মারা যাচ্ছে, পা-হাত হারাচ্ছে, অথচ কোম্পানি ও মালিকপক্ষ দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। এটি অমানবিক।”
এ ধরনের দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়রা দ্রুত তদন্ত, দায়ী গাড়ি ও চালকের শাস্তি এবং আহত পরিবারের চিকিৎসা ব্যায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে বহনের দাবি জানিয়েছেন।
https://slotbet.online/