জাতীয় পার্টির ঘাঁটিতে পরিবর্তনের হাওয়া, ইশতেহারে ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি
তরিকুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর) আসনে গণ অধিকার পরিষদ থেকে মনোনয়ন পাওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তরুণ নেতা জনাব আশরাফুল আলম আশরাফ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্যকে গতকাল দলের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুর আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেন।
জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে উদীয়মান এই রাজনীতিবিদের আগমনকে রংপুরের রাজনীতিতে ‘নতুন মাত্রা’ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নেতারা।
রংপুরের ভোটারদের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘জাতীয় পার্টির একচ্ছত্র আধিপত্য’ থেকে পরিবর্তন চাইছেন। তরুণ প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব দেখতে চাওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই গণ অধিকার পরিষদ জনাব আশরাফকে মনোনয়ন দিয়েছে।
কারমাইকেল কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা এবং দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা আশরাফ, বিশেষত বন্ধু মহল ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি রংপুর শহরের দর্শনা মোড় এলাকার বাসিন্দা।
আশরাফের ইশতেহার: উন্নয়নে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি
প্রার্থী আশরাফুল আলম আশরাফ তার নির্বাচনী প্রতীক ‘ট্রাক’-এ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিস্তারিত ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি। আমার জন্মভূমি রংপুর। আমি নির্বাচিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য যা যা করার দরকার আমি তাই করবো।”
তার ইশতেহারে রংপুর সদর ও নগরীর উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরা হয়েছে:
১. বেকারত্ব ও শিল্পায়ন:
রংপুর শহর ও সদর উপজেলাকে বেকারত্বমুক্ত করা হবে এবং প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
রংপুর সদর উপজেলায় একটি ইপিজেড (EPZ) স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।
শহরে গ্যাস সরবরাহ করে ছোট ছোট শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে।
২. অবকাঠামো ও পরিবহন:
রংপুরে একটি বিভাগীয় রেল স্টেশন এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের বিভাগীয় স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে।
লালবাগ থেকে রেল স্টেশনে যাওয়ার সুন্দর রাস্তা তৈরি করা হবে।
নগরীর প্রধান রাস্তাকে প্রশস্ত করে যানজট মুক্ত করা হবে।
৩. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
রংপুরে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি করা হবে।
বিভিন্ন ওয়ার্ডে ও ইউনিয়নগুলোতে সরকারি ক্লিনিক/সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
৪. সামাজিক সুরক্ষা ও পরিবেশ:
শহরকে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত করা হবে।
বয়স্ক, শিশু ও নারীদের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। নগরীকে নারী বান্ধব করে নারীদের জন্য বিশেষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতাগুলো ঘরে ঘরে জরিপ করে প্রকৃত ভাতভোগীদের দেওয়া হবে।
ঘাঘট নদী নিয়ে বৃহৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে।
৫. ক্রীড়া ও বিনোদন:
খেলাধুলার উন্নয়নে রংপুর মহানগরে ৬টি এবং সদর উপজেলায় ২টি মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে।
বিনোদন ও শারীরিক বিকাশের জন্য মহানগর ও সদর উপজেলার ওয়ার্ড-ইউনিয়নগুলোতে পার্ক স্থাপন করা হবে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া:
গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী আশরাফকে নিয়ে রংপুরের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, জাতীয় পার্টির একঘেয়েমি ভাঙতে তরুণ প্রজন্মের এরকম একজন নেতৃত্বের আসা জরুরি। স্থানীয় ও জাতীয় নেতারাও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, তরুণ প্রজন্মের জন্য তিনি একজন যোগ্য নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবেন।
ভোটারদের আশা, জনাব আশরাফের হাত ধরে রংপুর অঞ্চলের দীর্ঘদিনের চাহিদাগুলো পূরণ হবে এবং একটি নতুন রাজনৈতিক দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
https://slotbet.online/