থাই–ভিসা ও অবৈধ সিম চক্রের চাপে সাংবাদিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে নীলফামারীতে। জাতীয় দৈনিক আলোর বার্তা ও The Daily State পত্রিকার নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আল হেদায়েতুল্লা সিদ্দিকী (সুজন)–কে একটি অভিযোগনির্ভর মামলায় গ্রেফতার ও পরবর্তী ১৯ দিনের কারাভোগ করানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ।
অভিযোগ রয়েছে—থাই, ভিসা ও অবৈধ সিম সংক্রান্ত একটি সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাংবাদিক সুজন তাদের রোষানলে পড়েন। সাংবাদিক সুজন জানান, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে কিশোরগঞ্জ উপজেলার চৌধুরীর বাজার এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের কথা বলে তাকে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে পূর্বপরিকল্পিতভাবে কয়েকজন ব্যক্তি তাকে অবরুদ্ধ ও হেনস্তা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তিনি কিশোরগঞ্জ থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে যায়।
প্রথমদিকে পুলিশ তাকে সাংবাদিক হিসেবে সম্মান দিলেও পরবর্তীতে ‘ভুয়া ডিবি পরিচয়দান’ অভিযোগে আদালতে সোপর্দ করা হয়—যা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তারা দাবি করেন, ঘটনার সময় সুজনের গলায় তার বৈধ সাংবাদিক পরিচয়পত্র ঝুলছিল, যা ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়। তবুও তাকে যে প্রক্রিয়ায় আদালতে পাঠানো হয়েছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন সহকর্মীরা।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, অজ্ঞাত কয়েকজন ব্যক্তি ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চক্রের এক সদস্যকে মারধর করেছে। কিন্তু সাংবাদিক সুজনের সহকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন—নীলফামারী থেকে আসা একজন সাংবাদিক কীভাবে একাই কিশোরগঞ্জ এলাকায় এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন? তাদের মতে, এটি একটি সাজানো নাটক, যার মূল লক্ষ্য ছিল সুজনকে হয়রানি করা।
সাংবাদিক সমাজের দাবি, থাই–ভিসা ও অবৈধ সিম চক্রটি এলাকায় নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য কখনও ভুক্তভোগীর ভূমিকায়, কখনও জনসাধারণের ছদ্মবেশে মব সৃষ্টি করে বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতি তৈরি করে থাকে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া, ভয়ভীতি দেখানো এবং অপপ্রচার চালানো তাদের পরিচিত কৌশল বলে উল্লেখ করেন সংবাদকর্মীরা।
সাংবাদিক আল হেদায়েতুল্লা সুজন তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মীর হাসমত আলী, একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. সুকোমল বড়ুয়া এবং সাবেক তথ্যসচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুনাম অর্জন করেছেন।
ঘটনার পর সাংবাদিক সমাজ একসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত, মামলার নিরপেক্ষ বিচার এবং চক্রটির মূল হোতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। তাদের ভাষ্য—“সত্য প্রকাশের কারণে যদি সাংবাদিকদের এভাবে টার্গেট করা হয়, তাহলে স্বাধীন সাংবাদিকতা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। থাই–ভিসা ও অবৈধ সিম চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।”
https://slotbet.online/