মোঃ সিফাত উল্লাহ, বরিশাল
ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা কেন্দ্র করে শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা শুরু হয়। রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল।
শ্রমিকদের হামলায় সরকারি বিএম কলেজের ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। একাধিক বাস ও কাউন্টার ভাঙচুর করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগও করা হয়।
শ্রমিকদের দাবি, তাদের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে অর্ধশতাধিক বাস। আহত শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পর বিপুলসংখ্যক পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা বাসগুলোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। রাত ৯টার দিকে গোটা বাসস্ট্যান্ড এলাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে জানা যায়।
বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ছাত্র নেতা রাজু জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে বিএম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু বক্কর হিজলা উপজেলা থেকে ‘সোহান হাওলাদার’ পরিবহনের একটি বাসে বরিশালে ফিরছিলেন। এ সময় হাফ ভাড়া দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে আবু বক্করকে লাঞ্ছিত করে শ্রমিকরা।
পরে আবু বক্কর ঘটনাটি বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের জানান। সন্ধ্যা ৬টায় বাসটি নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে রাজুসহ বিএম কলেজের একদল শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদ গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এ সময় তাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন শ্রমিকরা। এরপর ২৫-৩০ জন শ্রমিক একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এতে ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ছাত্রনেতা রাজু।
অন্যদিকে, নথুল্লাবাদের পরিবহন শ্রমিক নেতা আরজু মৃধা বলেন, কলেজ বন্ধের দিনে হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না। শনিবার কলেজ বন্ধের দিন এক শিক্ষার্থী বাসে ওঠে হাফ ভাড়া দেওয়ার কথা বলেন। বাসের সুপারভাইজার সেটা না মেনে সম্পূর্ণ ভাড়া দাবি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন ওই শিক্ষার্থী। পরে তার সহপাঠীসহ শতাধিক শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদে হামলা-ভাঙচুর শুরু করে। তারা বাস টার্মিনালের মধ্যে একাধিক কাউন্টার, পার্কিং করা বিএমএফ, তুহিন, সামান্ত, জিএম এবং নিউ ভাই ভাই পরিবহনসহ একাধিক পরিবহনের অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। ৩০ জনের বেশি শ্রমিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে।
নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, একসঙ্গে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকাজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা বাস টার্মিনাল ভবন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা সবাই ভেতরে অবরুদ্ধ আছি। যে কারণে কতগুলো বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং শ্রমিক আহত হয়েছেন, তা বলা সম্ভব নয়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি মামুন উল ইসলাম বলেন, হাফ ভাড়া নিয়ে বাস শ্রমিক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। কিছুসংখ্যক বাস ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার করছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষের কারণে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।
https://slotbet.online/