স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় প্রাথমিক মানোন্নয়ন পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, নকলের সুযোগ দেওয়া এবং অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে এক কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব হালিমা বেগম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ট্যাকেরঘাট কেন্দ্রের অধীনে বড়ছড়া, লাকমা, বরুঙ্গাছড়া ও লালঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষায় অংশ নেয়। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ— কেন্দ্র সচিব পরীক্ষাকালীন সময়ে নিজের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নকলের সুযোগ দিলেও অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি আচরণ ছিল রূঢ় ও অপমানজনক।
লালঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,
“আমাদের ছাত্রদের সঙ্গে কেন্দ্র সচিব ম্যাডাম বাজে আচরণ করেছেন। শিশুরা কেঁদে জানিয়েছে, তারা ভয় পেয়েছে। অথচ নিজের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নকল করতে দিয়েছে, এমনকি কিছু খাতায় নিজে লিখে দিয়েছে বলেও শুনেছি।”
বড়ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও অভিযোগ করে বলেন,
“আমাদের ছাত্রদের সঙ্গেও কেন্দ্র সচিবের আচরণ ছিল অশোভন।”
এছাড়া, পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘বৃত্তি পরীক্ষার খরচ বাবদ’ টাকা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে।
ট্যাকেরঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জেরিন আক্তার বলেন,
“আমি নিজে ১,০০০ টাকা প্রধান শিক্ষক ম্যাডামকে দিয়েছি।”
তার বাবা মতিউর রহমান জানান,
“ম্যাডাম নিজেই ফোন করে আমাকে বিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে বলেন, বাইরের শিক্ষক আসবে— তাদের আপ্যায়নের জন্য টাকা লাগবে। পরে আমি মেয়ের হাতে টাকা দিয়ে পাঠাই।”
আরেক অভিভাবক রাকিব মিয়ার স্ত্রী বলেন,
“আমাদের কাছ থেকেও ৫০০ টাকা নিয়েছে। প্রথমে ১,০০০ টাকা দাবি করেছিল, পরে ৫০০ টাকা দিয়েছি।”
স্থানীয় এক কোচিং শিক্ষিকা জানান,
“আমার চার-পাঁচজন ছাত্রের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে। জানা মতে অন্তত ২০–২২ জন শিক্ষার্থীকে টাকা দিতে হয়েছে।”
অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“যেখানে শিক্ষার্থীরা সৎভাবে পরীক্ষা দিতে আসে, সেখানে শিক্ষকই যদি টাকা নেয় ও নকলের সুযোগ দেয়— তাহলে শিক্ষার মান কোথায় দাঁড়াবে?”
এ বিষয়ে অভিযোগের মুখে থাকা কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক হালিমা বেগম সাংবাদিককে বলেন,
“আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। আর যদি নিয়ে থাকি, সেটা কোনো প্রয়োজনীয় কাজে খরচ হয়েছে। কোন ছাত্র এমন বলেছে, তাদের নাম বলেন।”
সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং সরাসরি জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান মানিক বলেন,
“পরীক্ষা বাবদ কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া যাবে না। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
📍সংক্ষিপ্ত সারাংশ:
তাহিরপুরে প্রাথমিক মানোন্নয়ন পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, নকলের সুযোগ দেওয়া এবং অশোভন আচরণের অভিযোগে তোলপাড়। প্রশাসন বলেছে, তদন্তের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
https://slotbet.online/