ভাইয়া, দুই লাখ টাকা দরকার…ওর জন্য।’—এই ছিল চট্টগ্রামের হালিশহরের সাদিয়া নিগার প্রীতির শেষ কথা বড় ভাই কাউছার হিরোর সঙ্গে। শহরের বাইরে থাকা ভাই শান্ত গলায় বলেছিলেন, “রাত হলেও আসবো, তুই টেনশন করিস না।” কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর পূরণ করা হলো না। ভাই পৌঁছানোর আগেই বোন প্রীতি চলে গেলেন চিরবিদায়ে।
চোখে অশ্রু, কণ্ঠে কান্না মিশিয়ে মো. কাউছার হিরো বলছিলেন, “অল্প সময়ের ব্যবধানে ফোন এলো—‘তাড়াতাড়ি চট্টগ্রাম মেডিকেলে যান।’ গিয়ে দেখি, আমার বোনের নিথর দেহ স্ট্রেচারে। মুখে কোনো শব্দ নেই, চোখ দুটো বন্ধ, যেন এখনও অপেক্ষায়—ভাই আসবে বলে…”
প্রীতি (২৮) চট্টগ্রাম মহানগরের বন্দর থানার পূর্ব নিমতলা হাজি আয়ুব আলী সওদাগর বাড়ির ইমারত নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায়ী ফরিদুল আলম রিমনের স্ত্রী। তাদের ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। ২০১৮ সালে সামাজিকভাবে বিয়ে হয় তাদের।
ফরিদুল ও তার মা দাবি করেছেন—“প্রীতি ড্রইং রুমে গলায় ফাঁস দিয়েছে।” তবে বড় ভাই হিরো অভিযোগ করেছেন, “এটি আত্মহত্যা নয়, এটি পরিকল্পিত হত্যা।” তিনি বলেন, “আমার বোনকে স্বামী ও শাশুড়ি মিলে মানসিক নির্যাতন করত। গত দুই বছরে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা নিয়েছে ফরিদুল। সোমবার আবারও দুই লাখ টাকা দাবি করে। এ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝগড়ার সময় প্রীতি আমাকে ফোন দেয়।”
হিরো আরও বলেন, “ওই সময় আমি শহরের বাইরে ছিলাম। বোনকে বলেছিলাম, ‘রাত হলেও আসবো।’ আধ ঘণ্টা না যেতেই শাশুড়ির ফোন—‘চমেকে চলে যান।’ হাসপাতালে গিয়ে দেখি বোনের প্রাণ নেই।”
তিনি জানান, “প্রীতির স্বামী ঘটনার পরপরই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। পুলিশ আসার আগেই মরদেহ নিচে নামানো হয়—বলা হয় ‘বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।’ কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, এটি আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা যায়, ১৪ অক্টোবর, মঙ্গলবার রাত ৮টার পর প্রীতিকে হাসপাতালে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তখনই তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন বুধবার সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শেষবার বোনের ফোনের কথা মনে করে ভেঙে পড়েন হিরো। কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে তাঁর— “আমি শুধু চাই, আমার বোনের সুষ্ঠু বিচার হোক।”
https://slotbet.online/