নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
একসময় বাইসাইকেল ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম, শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে যা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। কালের পরিক্রমায় যান্ত্রিক বাহনের দাপটে সাইকেলের ব্যবহার কমে এলেও, রংপুরের পথে-ঘাটে এখনো চাকার সেই পুরোনো ‘ধ্বনি’ শোনা যায়। তবে এখন এই বাহনের প্রধান ব্যবহারকারী মূলত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং শহরের কাছাকাছি থাকা নিম্নবিত্ত কর্মজীবী মানুষ।
বিশেষ করে, রংপুর শহরে আশেপাশের উপজেলাগুলো থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ কাজের প্রয়োজনে সাইকেলে চড়ে যাতায়াত করছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং স্বল্প আয়ের কারণে, গণপরিবহণের ভাড়া এড়াতে বাইসাইকেলই তাদের প্রধান অবলম্বন হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর— এই ছয়টি উপজেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য নিম্নবিত্ত মানুষ সাইকেলে চেপে রংপুরের শহরে আসছেন। ভোর হতেই শুরু হয় তাদের এই নীরব যাত্রা। নির্মাণশ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিক— নানা পেশার মানুষ এই বাহনের ওপর নির্ভর করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সাইকেল ব্যবহারকারী অনেকেই জানান, প্রতিদিন বাসে বা অটোরিকশায় যাতায়াত করলে যে খরচ হয়, সেই টাকা বাঁচিয়ে তারা সংসারে বাড়তি সহযোগিতা করতে পারেন। এটি কেবল খরচই কমায় না, বরং শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের সুস্থ থাকতেও সাহায্য করে।
শহরের কেন্দ্রস্থলে বিভিন্ন কাজের খোঁজে আসা মো. রফিকুল ইসলাম, যিনি গঙ্গাচড়া থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ সাইকেলে আসেন, তিনি বলেন, “অটোরিকশায় গেলে দিনে কমপক্ষে৭০/৮০ টাকা খরচ হয়। সাইকেলে গেলে সেই টাকাটা বেঁচে যায়। এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় সাশ্রয়।”
অন্যদিকে, পরিবেশবান্ধব ও যানজটমুক্ত পরিবহণ হিসেবে সাইকেল একটি আদর্শ বিকল্প। যদিও বাইসাইকেল আরোহীদের জন্য শহরে পর্যাপ্ত লেন বা সুবিধা এখনো গড়ে ওঠেনি, তবুও এই হাজারো নিম্নবিত্ত মানুষের শ্রম ও জীবনধারণের অপরিহার্য সঙ্গী হিসেবে সাইকেল এখনো রংপুরের পথে দৃঢ়ভাবে টিকে আছে। একসময়কার শখের বাহন, আজ স্বল্পবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার এক নীরব চালিকাশক্তি।
https://slotbet.online/