পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর মধ্যবর্তী ডিম্বাকৃতির উপজেলা বাঁশখালী। এখানকার মানুষের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’। কিন্তু এটি এখন স্বাস্থ্যসেবার আড়ালে দুর্নীতি ও লুটপাটের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম যেন এক প্রহসন, ডাক্তার ও কর্মচারীদের একাংশ যার যার মতো অফিস করছেন, গরিব রোগীদের সঙ্গে চলছে নির্মম প্রতারণা। এক কথায়, এটি ‘হাসপাতাল নয়, অত্যাচারখানা’। হাসপাতালের পরিবেশ যেন পরিণত হয়েছে নৈরাজ্যের অভয়ারণ্যে।
নেই তদারকি, নেই জবাবদিহিতা, চলছে ছেলেখেলা। জানা গেছে, বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলমান দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন। বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ ক প্রকাশিত হয়। অন্যান্য জাতীয় গণমাধ্যম ও অনলাইন নিউজ পোর্টালেও শিরোনাম হয় বিষয়টি। তবে সবকিছুই যেন ছিল গুঁড়েবালির মতো, কার্যকর কোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং অনিয়ম এখন আগের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাসপাতালের অফিসিয়াল সময় সকাল ০৯টা থেকে দুপুর ২টা হলেও কেউ আসেন ১১টায়, কেউ ১২টায়, কেউ আসেনই না। কেউ নিজের ব্যবসা সামলাচ্ছেন, আবার কেউ সরকারি অফিস সময়েই চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন। এত বড় নৈরাজ্য দেখেও প্রশাসন নিরব—তাদের এই নীরবতা কি দায়মুক্তির ইঙ্গিত?
গরিব রোগীদের জন্য এই হাসপাতাল যেন এক বিভীষিকা। অনেকে ধারদেনা করে কিংবা হাঁস-মুরগি বিক্রি করে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, কিন্তু হাসপাতালে ঢুকতেই পড়ে যান দালাল ও দুর্নীতির ফাঁদে। চিকিৎসা তো দূরের কথা প্রথমেই মুখোমুখি হতে হয় প্রতারণার।
একজন রোগী যখন বুকের ব্যথা বা পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে হাসপাতালে আসেন, তখনই শুরু হয় তার বঞ্চনার মহাকাব্য। ভিজিট, সিরিয়াল, রিপোর্ট, ওষুধ সবখানেই দুর্নীতির থাবা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, একাধিক ধাপে প্রতারণা চলছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে ঘিরে। অনেক ডাক্তার অফিস সময়েই বেসরকারি চেম্বারে বসেন। নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে কমিশন চুক্তি রয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয় “এই ফার্মেসিতে যাও”, “ওই ল্যাবে করাও” এ যেন অপরাধ নয়, বরং নিয়ম! প্রেসক্রিপশন নিয়েও চলে টানাটানি। দালাল চক্র সব চেম্বারে ঘাপটি মেরে বসে আছে, কারো নিস্তার নেই।
ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন—এই অনিয়মের দায় কে নেবে? উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নজরে কি এসব আসছে না?
সরল গ্রামের বাসিন্দা তারা বানু নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, “আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি দুই দিন, কিন্তু ডাক্তার ঠিকমতো আসেন না। খাবারও ঠিকমতো দেয় না, আর যেটুকু দেয়, তা খাওয়ার যোগ্য না।” স্থানীয় যুবক মনির বলেন, “দুপুর ১২টায় হাসপাতালে গেছি, তখনও ডাক্তার আসেনি। পরে দেখি উনি বাজারের এক ক্লিনিকে রোগী দেখছেন।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “প্রশাসনিক তদারকি একেবারেই নেই বললেই চলে। যার যেমন খুশি, সে তেমন চলছে।” অধিকাংশ ওয়ার্ডে লাইট নাই, ফ্যান গুলিও খুবই স্লো, সম্ভবত কেপাসিটার চলে গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এখনো অনিয়মের কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।
লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। জনগণ যেন সঠিক সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে নজরদারি চলমান রয়েছে। অভিযোগ পেলে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
https://slotbet.online/