মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম চট্টগ্রাম বাঁশখালী প্রতিনিধি

বাঁশখালীতে এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে বালি উত্তোলনের সময় দুটি ড্রেজার আটক করেছে কোস্ট গার্ডের টহল দল। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কুতুবদিয়া চ্যানেলের ছনুয়া ইউনিয়নের মনুমিয়াজী ঘাট এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন কালে এসব ড্রেজার জব্দ করে কোস্ট গার্ড। পরে ড্রেজার দুটিসহ বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত ৭-৯ জন শ্রমিককে গণ্ডামারা খাটখালী ঘাটে নিয়ে যায় কোস্ট গার্ডের টহল টিম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোস্ট গার্ডের এক কর্মকর্তা জানান, জব্দ করা ড্রেজার দুটি ছাড়িয়ে নিতে এক বিএনপি নেতা ইউএনও অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় লবিং করেন। সারাদিনের নাটকীয়তা শেষে রাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাবেয়া এন্টারপ্রাইজ দুটি ড্রেজার নিয়ে কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছিল। খবর পেয়ে কোস্ট গার্ডের খাটখালী জোনের একটি টহল টিম ঘটনাস্থলে হাজির হয়। এসময় বালি উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের অনুমতি সম্বলিত বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ড্রেজার দুটি খাটখালী ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরবর্তীতে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসীম উদ্দিন এর নেতৃত্বে খাটখালী ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে বালি উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ড্রেজার দুটি জব্দ করা হয়। এসময় একটি ড্রেজারকে দুই লাখ টাকা করে মোট ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।

এরমধ্যে একটি ড্রেজারের মালিকপক্ষ জরিমানা পরিশোধ করলেও তাৎক্ষণিক পরিশোধ না করায় আরেকটি ড্রেজার জব্দ করা হয়। ওই ড্রেজারের মাঝি মো. ইউসুফ (৪৫) কে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত ইউসুফ ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ মঙ্গলচর এলাকার মোহাম্মদ মোস্তফার ছেলে।

কোস্ট গার্ডের খাটখালী জোনের কোম্পানি কমান্ডার (সিসি) বলেন, এসিল্যান্ড স্যার এসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। একটি বাল্কহেড এর মালিকপক্ষ এসে জরিমানা দিয়ে নিয়ে গেছে। আরেকটি জরিমানা দিতে না পারায় জব্দ করা হয়েছে এবং মাঝিকে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসীম উদ্দিন বলেন, মনুমিয়াজি ঘাট এলাকায় নদীতে বল্কহেড ড্রেজার ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন এর অভিযোগের ভিত্তিতে কোস্টগার্ডের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় দুটি বল্কহেড ড্রেজার আটক করা হয়। দুটি ড্রেজারবাহী বোটকে ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। একটি বোটের জরিমানার অর্থ নগদে পরিশোধ করায় মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। অপরটির জরিমানা তাৎক্ষণিক পরিশোধ না করায় সেটিকে জব্দ করে কোস্ট গার্ডের হেফাজতে দেয়া হয়েছে এবং বোটে থাকা ১ জনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপি নেতা রেজাউল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে রেজাউল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সাগরে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করে বিক্রির মহোৎসব চলছিল। বেড়িবাঁধের নাম করে বালি তুললেও চলছিল বালির রমরমা ব্যবসা। এই কাজে দক্ষিণ জেলা বিএনপির এক নেতাও জড়িত আছেন। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা মনুমিয়াজী ঘাট এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন করে কুতুবদিয়াসহ আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করে আসছিল।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার জন্য বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও ছনুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরীকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।