তরিকুল ইসলাম, প্রাক্তন ছাত্র
ঐতিহ্যের বাহক মূল ফটকটি ভেঙে দেওয়া হলো! এ যেন কেবল একটি ফটকের পতন নয়, কারমাইকেল কলেজের দীর্ঘদিনের ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের যবনিকা! শিক্ষার্থীদের ৩৭ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় গতকাল এটিও গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হয়তো নতুন একটি ফটক তৈরি হবে, যা আরও আধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দন হবে, কিন্তু পুরোনো ফটকটির শূন্যতা পূরণ করা সহজ হবে না।
এই ফটকটি কেবল কলেজের প্রবেশপথ ছিল না, এটি ছিল কলেজের আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারমাইকেল কলেজের সবুজ ক্যাম্পাসে প্রবেশের মুখেই এই ফটকটি দাঁড়িয়ে থাকতো এক শান্ত প্রহরী হয়ে। এর চূড়ায় লেখা বাণীগুলো শুধু দর্শনার্থীদেরই নয়, শিক্ষার্থীদের মনেও এক গভীর ছাপ ফেলতো। বলা হয়, তৎকালীন শিক্ষক ও কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি নির্মিত হয়েছিল, যা এই ফটককে আরও বেশি অর্থবহ করে তুলেছিল। এটি ছিল পরিশ্রম, সংহতি এবং একটি উন্নত শিক্ষাঙ্গনের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের প্রতীক।
দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, অসংখ্য শিক্ষার্থী এই ফটক দিয়ে কলেজে প্রবেশ করেছে, তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। আবার এই ফটক দিয়েই তারা বের হয়েছে নতুন দিনের বার্তা নিয়ে, জীবনের পথে যাত্রা শুরুর জন্য। কত স্মৃতি, কত আড্ডা, কত আন্দোলনের সাক্ষী এই ফটক! হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন আর বাস্তবতার কত গল্প জমে ছিল এর প্রতিটি ইটে।
তবে সময়ের চাকা তো আর থেমে থাকে না। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন অবশেষে ফলপ্রসূ হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। কলেজের উন্নয়নের জন্য, আধুনিকায়নের জন্য কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। হয়তো এই ফটকটি সেই পরিবর্তনের পথ করে দিল। আশা করা যায়, নতুন ফটকটি কলেজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও সম্ভাবনাময় দ্বার উন্মোচন করবে এবং একই সাথে কারমাইকেলের ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
তবুও, যারা এই ফটকের সঙ্গে শৈশব থেকে তারুণ্যের স্মৃতি বুনেছিলেন, তাদের জন্য এই ভাঙন হয়তো এক দীর্ঘশ্বাসের কারণ। স্মৃতির পাতায় ফটকটি চিরকাল অমলিন থাকবে, কারমাইকেলের এক নীরব সাক্ষী হিসেবে।
https://slotbet.online/