তরিকুল ইসলাম, রংপুর
বলছিলাম ২০০৪ সালের কথা। তখন সদ্য আত্মপ্রকাশ করেছে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকা। আর এর প্রতি বৃহস্পতিবারের আকর্ষণ ছিল তাদের বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘প্রিয়জন সমাবেশ’। সেই শুরু থেকেই আমি এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম, নিয়মিত লেখালেখি করতাম। আমার লেখা ছাপা হওয়ার আনন্দ ছিল তখন আকাশছোঁয়া।
ধীরে ধীরে, প্রিয়জন সমাবেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও গভীর হলো এবং একসময় আমি কারমাইকেল কলেজ প্রিয়জন সমাবেশের সভাপতি নির্বাচিত হলাম আর বন্ধু কামরুল ইমাম হলো সাধারণ সম্পাদক। এটি ছিল আমাদের জন্য এক অসাধারণ প্রাপ্তি।
আমাদের কমিটিতে তখন প্রায় ২০০ জন সক্রিয় সদস্য ছিল। আমরা শুধু নামেই একটি সংগঠন ছিলাম না, আমাদের কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আমরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করতাম। আমাদেরকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করতেন নয়া দিগন্তের তৎকালীন রংপুর বুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান ভাই। আমরা এই শোভাযাত্রাগুলো নিয়ে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করতাম ।
শোভাযাত্রার একটি মজার অংশ ছিল ছবি তোলা। আমাদের বন্ধু-বান্ধবীদের মধ্যে বিশেষ করে মুক্তি, সঞ্চিতা, শিউলি, দিনা, আল্পনা, সফিক, তারেক, শিপনের মধ্যে একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা চলত—কে কত আগে গিয়ে দাঁড়াতে পারে, যাতে পরদিন পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবিতে ভালো করে আসা যায়! সবাই চাইত সামনের সারিতে থাকতে, নিজেদের প্রিয়জন সমাবেশের একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে ক্যামেরাবন্দী হতে। সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনো ঠোঁটের কোণে হাসি খেলে যায়। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠত আর আমরা সবাই মিলে স্লোগান দিতাম, যা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করত প্রতিটি শোভাযাত্রায়।
আর সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তটি আসত যখন পরদিন পত্রিকায় আমাদের শোভাযাত্রার খবর ছবিসহ ছাপা হতো। নিজেদের পরিশ্রম, নিজেদের উদ্যোগ এত বড় পরিসরে দেখতে পাওয়াটা ছিল এক অসাধারণ অনুভূতি। পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে যখন দেখতাম আমাদের শোভাযাত্রার ছবি আর খবর শিরোনাম হয়েছে, তখন বুকটা গর্বে ভরে যেত। সহপাঠী, শিক্ষক এবং পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা আমাদের আরও বেশি উৎসাহিত করত।
এর স্বীকৃতি হিসেবে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার পক্ষ থেকে ২০০৫ সালে কারমাইকেল কলেজ “প্রিয়জন সমাবেশ ” সারাদেশের ১০টি সেরা প্রিয়জন সমাবেশের মধ্যে ৪র্থ “সেরা প্রিয়জন সংগঠন” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। সেসময় ঢাকার সেগুনবাগিচার কচিকাঁচার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে সেই পুরস্কার (ক্রেস্ট) গ্রহন করেছিলাম। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, কবি আল মাহমুদ, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি জাকির আবু জাকের, কন্ঠ শিল্পী আসিব আকবরসহ সারাদেশ থেকে আসা প্রিয়জন সমাবেশের সদস্যরা। আর আমার সাথে ছিলেন তৎকালীন রংপুর প্রিয়জন সমাবেশের সমন্বয়কারী শামসুজ্জামান সোহাগ ভাই। যিনি বর্তমানে বিভাগীয় লেখক পরিষদ রংপুরের সাধারণ সম্পাদক।
প্রিয়জন সমাবেশ আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় অংশ, যা আমাকে দিয়েছে নেতৃত্ব দানের অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক দক্ষতা আর একদল অসাধারণ বন্ধু। সেই দিনগুলো আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন।
https://slotbet.online/