চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা।ব্যস্ত নগরজীবনের ভেতরেও যেখানে মানুষের কষ্ট লুকিয়ে থাকে অলিগলিতে।ঠিক সেখানেই দিনের পর দিন নীরবে কাজ করে চলেছেন একজন মানুষ।নাম সোলায়মান রুবেল।পরিচয়ে তিনি পাঁচলাইশ থানার আওতাধীন ৪৩ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন সদস্য।কিন্তু এই পরিচয়ের বাইরেও তার আরেকটি নাম আছে।এলাকার অনেক মানুষের কাছে তিনি মানবতার ফেরিওয়ালা।
সোলায়মান রুবেলের জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৮৯ সালে। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া।তবে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায়।শৈশব থেকেই তিনি দেখেছেন শহরের বৈচিত্র্য।দেখেছেন ধন আর দারিদ্র্যের পাশাপাশি অবস্থান।কেউ ভরপেট খায়,কেউ না খেয়ে ঘুমায়।এই বৈপরীত্যই ধীরে ধীরে তার মনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।কেন কিছু মানুষের জীবন এত কঠিন।কেন কিছু মানুষ সুযোগ পায় আর কিছু মানুষ বঞ্চিত হয়।
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই এক সময় তিনি পরিচিত হন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন ও আদর্শের সঙ্গে। ১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে জন্ম নেওয়া এবং ৩০ মে ১৯৮১ সালে শাহাদাত বরণকারী জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি।তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা একজন সেনাপ্রধান এবং স্বাধীনতার ঘোষক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের উপর বর্বর আক্রমণ চালায় তখন তিনি বিদ্রোহ করেন।নিজের পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণার বিবৃতি পাঠ করেন।মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের অধিনায়ক।বীরত্বের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন।
এই ইতিহাস জানার পর সোলায়মান রুবেলের ভেতরে এক ধরনের আলোড়ন শুরু হয়।প্রথমে ছিল ভালো লাগা। তারপর সেই ভালো লাগা ধীরে ধীরে রূপ নেয় গভীর ভালোবাসায়।একজন মানুষ কিভাবে দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে পারে কিভাবে মানুষের অধিকার আর স্বাধীনতার জন্য দাঁড়াতে পারে এই চিন্তা তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়।তিনি বুঝতে পারেন রাজনীতি মানে কেবল ক্ষমতা নয়।রাজনীতি মানে মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষের অধিকার রক্ষা করা।
এই বিশ্বাস থেকেই তিনি যুক্ত হন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে। মিছিল মিটিং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে থাকেন।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে তিনি দায়িত্ব পান স্বেচ্ছাসেবক দলে।বর্তমানে তিনি পাঁচলাইশ থানার আওতাধীন ৪৩ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন সদস্য।
তবে সোলায়মান রুবেলকে আলাদা করে চেনায় তার মানবিক কাজ।তিনি শুধু রাজনৈতিক কর্মী নন।তিনি একজন মানুষ।একজন এমন মানুষ যিনি বারবার ছুটে যান অসহায় মানুষের ডাকে।কোনো অসুস্থ প্রতিবেশী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে দেখা যায় সেখানে।কোনো দরিদ্র পরিবারের ঘরে খাবারের অভাব হলে চুপচাপ পৌঁছে দেন সহায়তা।কোনো শিক্ষার্থী বই কিনতে না পারলে তিনি খোঁজ নেন কীভাবে পাশে দাঁড়ানো যায়।
বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় তার বন্ধু মহলে প্রায়ই শোনা যায় সোলায়মান রুবেলের কথা।শোনা যায় তিনি রাতের বেলায়ও অসহায় মানুষের খোঁজ নেন।শোনা যায় কারো বিপদে পড়লে ফোন দিলেই তিনি ছুটে যান।এইসব গল্প মুখে মুখেই তাকে পরিচিত করেছে মানবতার ফেরিওয়ালা নামে।
তার সবচেয়ে বড় গুণ হলো অহংকারহীনতা।রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও ক্ষমতার দম্ভ তার মধ্যে কখনো দেখা যায় না।তিনি নিজেই বলেন বাঁচবো আর কয়দিন।এই ক্ষণিকের জীবনে মানুষের সাথে অহংকার করে কী লাভ।ক্ষমতা দেখিয়ে কী হবে।মানুষের ভালোবাসাই তো আসল অর্জন।
তার চলার পথ সহজ ছিল না।রাজনীতির মাঠে থাকতে গেলে নানা বাধা আসে নানা সমালোচনা আসে।তবুও তিনি নিজের অবস্থান থেকে সরে যাননি।কারণ তার কাছে রাজনীতি মানে মানুষের পাশে থাকা।তিনি মনে করেন একজন কর্মীর সবচেয়ে বড় পরিচয় তার কাজ।মানুষের চোখে তার গ্রহণযোগ্যতা।
প্রতিদিনের জীবনে তার সময় ভাগ হয়ে যায় দুই অংশে। একদিকে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম সভা মিছিল সংগঠনিক দায়িত্ব। অন্যদিকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।এই দুইয়ের মাঝেই কেটে যায় তার দিন। ক্লান্তি আসে কিন্তু থেমে যান না।
অনেকেই বলেন এই সময়ে এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। যখন চারপাশে স্বার্থ আর সুবিধার হিসাব চলে তখন সোলায়মান রুবেলের মতো মানুষ নিঃশব্দে কাজ করে যান। কোনো প্রচার নেই।কোনো বড় দাবি নেই।শুধু মানুষের পাশে থাকা।
গ্রাম সাতকানিয়া আর শহর বায়েজিদের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই মানুষটির জীবন গল্প আসলে আমাদের সমাজেরই গল্প।একটি সমাজ যেখানে আদর্শ এখনো কিছু মানুষের বুকের ভেতর জ্বলে।যেখানে রাজনীতি মানে এখনো মানুষের জন্য কিছু করা।
জিয়াউর রহমানের আদর্শ সোলায়মান রুবেলের কাছে কোনো স্লোগান নয়। এটি তার জীবনের দর্শন।তিনি বিশ্বাস করেন শক্ত হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি দরকার মানবিক হৃদয়।দরকার এমন নেতৃত্ব যারা সাধারণ মানুষের কষ্ট বুঝবে।
আজ যখন রাজনীতি নিয়ে মানুষের অনাস্থা বাড়ছে তখন সোলায়মান রুবেলের মতো কর্মীরা প্রমাণ করেন রাজনীতি এখনো মানুষের জন্য হতে পারে। ক্ষমতার বাইরে থেকেও মানুষের জীবনে আলো ফেলা যায়।
বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার অনেক মানুষ বলেন রুবেল ভাই থাকলে আমরা ভরসা পাই।এই ভরসাই তার সবচেয়ে বড় অর্জন।কোনো পদবি কোনো পরিচয় নয়।ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি খুব বড় বড় কথা বলেন না।শুধু বলেন মানুষের পাশে থাকতে চাই।যতদিন পারি।জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে নিয়ে সততার সঙ্গে পথ চলতে চাই।এই গল্প কেবল একজন ব্যক্তির নয়।এই গল্প একটি ধারার।যেখানে রাজনীতি আর মানবতা একসাথে হাঁটে।যেখানে অহংকার নয় বরং সহমর্মিতা নেতৃত্বের ভাষা।
সোলায়মান রুবেল আজ কোনো বড় মঞ্চের আলোয় নন। কিন্তু অসহায় মানুষের চোখে তিনি আলো।আর সেই আলোই হয়তো একদিন সমাজকে পথ দেখাবে।
https://slotbet.online/