শেখ মোঃ করিম বকসো স্টাফ রিপোর্টারঃ
সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে যথা সময়ে প্রতিমা সাজিয়ে পূজারীদের হাতে তুলে দিতে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা বানানোর কাজ করছেন কারিগররা। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতিবছর শরৎ ঋতুতে অনুষ্ঠিত হয় এবং পূজা উদযাপন প্রস্তুতি ব্যাপক আগে থেকেই নেওয়া হয়। গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
চলতি বছরে এই উপজেলায় ৪৫ টি পুজা মন্ডপে শারদীয় উৎসব শুরু হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছের তাড়াশ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ সান্য
এ বিষয়ে কারিগর কালাচাঁন সুত্রধর বলেন, ছোট বেলা থেকেই এই পেশাতে আছি, জীবনের বেশীর ভাগ সময়ই প্রতিমা তৈরীর কাজ করে কাটিয়ে দিলাম, কিন্তু শিল্পির মর্যাদা আর পেলাম না। তিনি আরও বলেন, সাধারনত বাড়িতেই প্রতিমা তৈরী করি। শুধু রং এর কাজটা যে মন্দিরে পূজা হবে সেখানে গিয়ে করে দেই। কিন্তু যেখানে যোগাযোগ খারাপ সেখানে গিয়েই সমস্ত কাজ করে দেই।
বাজারে রং সহ সকল জিনিস পত্রের দামই বেশী, সে তুলনায় পরিশ্রমের দাম বাড়ছে না তাই এই পেশায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারিগরের মেয়ে, রানী ভবানী কলেজের মার্কেটিং’এ অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী নীপা রানী সুত্রধর বলেন, পরিবারের সদস্যদের প্রতিমা তৈরী করা দেখে দেখেই বড় হয়েছি, যা দেখতে বেশ ভালোই লাগে। বংশ পরম্পরায় চলে আসা মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পীর স্বীকৃতির পাশাপাশি আর্থিক প্রনোদনা দেবার দাবীও জানান তিনি।
কারিগরের স্ত্রী বিমলা রানী সুত্রধর বলেন, দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশীনী। দেবী দুর্গা কখনো দশভূজা ( দশটি হাত থাকায়, একেক হাতে একেক অস্ত্র ও আর্শিবাদ) কখনো আদ্যাশক্তি মহামায়া, কখনো বা উমা নামে পরিচিতা।
কারিগর বিশ্বজিদ সুত্রধর বলেন, এ বছর ২০২৪ সালে মহালয়া পড়েছে ২ অক্টোবর, বুধবার, মহাপঞ্চমী – ৮ অক্টোবর, মহাষষ্ঠী- ৯ অক্টোবর, মহাসপ্তমী – ১০ অক্টোবর, মহাঅষ্টমী – ১১ অক্টোবর, মহানবমী – ১১ অক্টোবর এবং মহাদশমী – ১২ অক্টোবর। শাস্ত্রমতে তিথির মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসব বা অকাল বোধনের ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ও শনিবার (১২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। তিনি আরো বলেন, পুজার আয়োজকরা যদি পুর্ব থেকে প্রতিমা তৈরীর চাহিদা দিত, তাহলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হত।
প্রতিমা তৈরীর উপকরণ খড়, বাঁশ, কাঠ, দড়ি, রং ইত্যাদির দাম বাড়লেও আমাদের পরিশ্রমের দাম সে তুলনায় বাড়েনি। তিনি বলেন, হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী মনে করা হয়, দেবীর দুর্গার মর্তে আগমন ও গমন যে বাহনে, তার ওপর নির্ভর করে গোটা বছরটা পৃথিবী বাসীর কেমন কাটবে। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, প্রতি বছরই দেবী আসে যায় কিন্ত আমাদের ভাগ্যন্নয়ন হয়না।
আর এ কারণে অনেকে পৈতৃক পেশা পাল্টিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এখানে আমরা ৩ জন কারিগর প্রতিমা তৈরীর কাজ করি। এবছর ৫টি প্রতিমার চাহিদা পেয়েছি। প্রতিটি প্রতিমা তৈরী করতে ১২/১৫ দিন সময় লাগে এবং প্রতিটি প্রতিমা তৈরী করতে সাধারনত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নেই। তবে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ি তৈরী করতে চাইলে এই খরচ কিছুটা বেড়ে যায়।
তাড়াশ উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ সান্যাল বলেন, এ বছর এই উপজেলায় মোট ৪৫ টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে তাড়াশ পৌরসভায় ও সদর ইউনিয়ন মিলে -১৫টি, মাধাইনগর ইউনিয়নে -৬টি, দেশীগ্রাম ইউনিয়নে -৯টি, তালম ইউনিয়নে -৮টি, বারুহাঁস ইউনিয়নে-৪টি, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নে-২টি, নওগাঁ ইউনিয়নে-১টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এবার দেবী দুর্গা আসছেন দোলায় চড়ে আর দেবী দুর্গা বা উমা কৈলাসে ফিরবেন ঘটকে করে। পূজা যেন সবাই মিলেমিসে নির্বিগ্নে আনন্দের সাথে পালন করতে পারেন এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতাও চান।
উল্লেখ্য, এ বছর ২০২৪ সালে মহালয়া পড়েছে ২ অক্টোবর, বুধবার, মহাপঞ্চমী – ৮ অক্টোবর, মহাষষ্ঠী- ৯ অক্টোবর, মহাসপ্তমী – ১০ অক্টোবর, মহাঅষ্টমী – ১১ অক্টোবর, মহানবমী – ১১ অক্টোবর এবং মহাদশমী – ১২ অক্টোবর।
তাড়াশ থানার ওসি মোঃ আসলাম হেসেন বলেন, প্রতি বছরের মত এ বছরও দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও নিবিঘ্নে করতে পুলিশি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রতিটি পুঁজা মন্ডপে আইন-শৃঙ্গলার ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়াও সনাতন ধর্মের লোকজন যাতে নির্বিগ্নে পূজা উদযাপান করতে পারেন সে জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।
https://slotbet.online/