সাত্তার আব্বাসী, চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :
"যমুনা" নামেই যেন অনন্ত দ্বন্দ্ব। কখনো সে আশীর্বাদ, কখনো অভিশাপ। কল্যাণময়ী কখনো, কখনো নিঃস্বতার ছায়া। সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যমুনার প্রবাহ তাই শুধু পানি নয় তা যেন সময়ের স্রোতের মতো সবকিছু ভাসিয়ে নেওয়া এক চলমান স্মৃতিচিত্র।
শাহজাদপুর থেকে এনায়েতপুর পর্যন্ত চরাঞ্চলজুড়ে দশকের পর দশক ধরে যমুনার ভাঙনে নিঃশেষ হয়েছে শত শত ঘরবাড়ি, বিলীন হয়েছে জীবনের পূর্ণ অধ্যায়। সেখানে আজ দেখা যাচ্ছে এক নতুন দৃশ্যপট স্থির, অথচ দৃপ্ত। ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক বাঁধের প্রতিটি ইট যেন রচনা করছে প্রতিরোধের নতুন ইতিহাস।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ৬৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা এই প্রকল্প কেবল একটি নির্মাণ নয় এ যেন এক ক্ষতস্থানে আত্মবিশ্বাসের পুনর্জন্ম। নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য থাকলেও কাজ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশ্বস্ত করছেন, বর্ষার আগেই ভাঙনপ্রবণ এলাকা সুরক্ষিত হবে।
গত এক দশকে যমুনার বুকে তলিয়ে গেছে প্রায় দুই হাজার পরিবারের স্বপ্ন। সেই করুণ ইতিহাসের এক প্রতিনিধি আয়েশা খাতুন। কণ্ঠে কান্নার ভার, চোখে হাহাকার “এই জমিটা আছিল আমার ঘর। নদী শুধু মাটি নেয় নাই, শ্বাসও নিছে।”
প্রতিটি ভাঙা ঘরের পেছনে রয়েছে একেকটি ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতি। শুধু দারিদ্র্য নয়, রয়েছে অস্তিত্ব হারানোর বেদনা। সেই বাস্তবতায় এই বাঁধ যেন শুধু বাধা নয় এ এক যুগান্তকারী প্রতিজ্ঞা: মানুষ আবার দাঁড়াবে।
এই বাঁধ ঘিরেই গড়ে উঠছে উন্নয়নের নতুন সড়কচিত্র। আশেপাশের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দেবে এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়ে কৃষক কাশেম মিয়া বলেন, “রাস্তা হইলে ফসল বাজারে নিতে পারুম, রোগী লইয়া পানিতে আর ভাসতে হইব না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপরিকল্পিত হলে এই বাঁধকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, নদীভিত্তিক পর্যটন, এবং সেচনির্ভর নতুন জনপদ। যমুনার চিরন্তন ভাঙনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এখন সিরাজগঞ্জ দেখছে সম্ভাবনার নতুন মানচিত্র।
এই বাঁধ যেন মানুষের সাহস ও সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। যে মানুষ একদিন নদীর ভয় পেত, সে আজ বলে, “আমরা গড়ব।” প্রকৃতির সঙ্গে বিরোধ নয়, এ যেন সহাবস্থানের এক নিদর্শন। বাঁধের প্রতিটি স্তরে যেন উচ্চারিত হচ্ছে আমরা শুধু টিকে থাকব না, বিকশিতও হব।
এই বাঁধ শুধু প্রতিরক্ষা নয় এ এক স্বপ্নের ভিত্তিপ্রস্তর। যেখানে প্রোথিত হচ্ছে প্রার্থনার ধ্বনি, প্রতিজ্ঞার শিকড়, এবং প্রতিরোধের কবিতা।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ সোহেল সরকার কর্তৃক লন্ডন থেকে প্রকাশিত
সহ সম্পাদকঃ মোঃ শেখ ফরিদ বার্তা বিভাগঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
সাথী সোহেল জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন (আর্তমানবতার সেবায়) বিকাশঃ ০১৩০২৪৪৭৩৭৩