সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঐতিহ্যবাহী রংপুর কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসের নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ২১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নেমেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনে নেমেছিলেন তারা। সেসময় কলেজের উপাধ্যক্ষ জনাব প্রফেসর ড. রেহেনা খাতুনের মৌখিক আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। সেইসাথে তারা কলেজ প্রশাসনকে তাদের যুক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেধে দেন।
খবর নিয়ে জানা যায়, কলেজ প্রশাসন তাদের কিছু দাবি মেনে নিলেও অধিকাংশ দাবি মেনে নেয়নি বলে আবারো আন্দোলনে নেমেছেন তারা। এসময় ক্যাম্পাসে হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রীকে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলে যোগ দিতে দেখা যায়। বিশাল মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। মিছিলে বার বার তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহবান জানানো হয়। মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন তারা।
মিছিল শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এসময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে বক্তব্য দেন। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে যুক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেন এবং এক কপি দাবি সম্বলিত লিপি অধ্যক্ষের নিকট পৌঁছে দেন। তাদের দাবিগুলো হলোঃ
১. ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্হাপন করা, ২. শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের আইডি কার্ড নিশ্চিত করা, ৩. ক্যাম্পাসের অন্ধকার স্হানে লাইটিং এবং পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, ৪. কলেজের চতুর্দিকে প্রাচীর নির্মাণ করা, ৫. কর্মচারীদের নিদিষ্ট পোশাকের ব্যবস্হা করা এবং যে সকল কর্মচারী ক্যাম্পাসে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের সহযোগিতা করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্হা করা, ৬. মূল ফটক ও ক্যাম্পাসের ভিতরের সকল দোকান পাট উচ্ছেদ করা, ৭. অতিদ্রুত কলেজ ক্যান্টিন চালু করা,
৮. শীঘ্রই শতবর্ষী ভবনে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা, ৯. কলেজে ৭৫ % উপস্থিতি নিশ্চিত করা, ১০. দ্রততম সময়ের মধ্যে উন্নতমানের কলেজ বাস চালু করা, ১১. বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে গঠিত সকল কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা, ১২. দুর্নীতির সাথে জড়িত শিক্ষক কর্মচারীদের বিচারের মুখোমুখি করা, ১৩. লাইব্রেরী থেকে শহীদ আবু সাঈদ হল হয়ে উচ্চমাধ্যমিক ভবন এবং আইসিটি ভবন পর্যন্ত রাস্তা পাকা করণ করাসহ সকল রাস্তা সংস্কার করা, ১৪. ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য মানসম্মত বিশ্রামাগার নির্মাণ করা,
১৫. ছাত্রী হোস্টেলের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে ছাত্রীদের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া, ১৬. শহীদ আবু সাঈদ হলের নিরাপত্তার স্বার্থে চারিদিকে প্রাচীন নির্মাণ করা,
১৭. মসজিদে লাইব্রেরীর ব্যবস্থা করা, ১৮. ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্মত ওয়াসরুমের ব্যবস্থা করা (ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা) এবং বিভিন্ন স্হানে পানির ব্যবস্হা করা, ১৯. তথ্যপ্রযুক্তিতে উন্নয়ন সাধন করা,
২০. অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করা এবং ২১. ওসমানী হল ও সিএম হল সংস্কার করে দ্রততম সময়ের মধ্যে খুলে দেওয়া ও মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়া।
এসময় শিক্ষার্থীদের সমাবেশস্হলে আসেন কলেজের অধ্যক্ষ জনাব প্রফেসর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, উপাধ্যক্ষ জনাব প্রফেসর ড. রেহেনা খাতুন ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক জনাব দিলীপ কুমার। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো আমলে নেন এবং প্রায় সবগুলোই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। প্রথমে দাবিগুলো পড়ে শুনান এবং কিছু যুক্তি উপস্থাপন করেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক জনাব দিলীপ কুমার রায়। এরপর প্রফেসর ড. রেহেনা খাতুন ২১ দফা সম্বলিত লিপিটি পড়েন এবং বিভিন্ন যুক্তি শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সাথে একমত পোষণ করেন। সেই সাথে কলেজ প্রশাসনের সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন উপাধ্যক্ষ ড. রেহেনা খাতুন। তবে তিনি শিক্ষার্থীদের কিছু শ্লোগানে ( ভূয়া ভূয়া) মনোক্ষুণ্ণ হন।
এসময় শিক্ষার্থীদের তাঁর বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে দেখা যায়। এরপর অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। শিক্ষার্থীরাও তাদের বক্তব্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
এক পর্যায়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের দোকান পাট উচ্ছেদ করা হয়। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কলেজের কর্মচারীরা অংশ নেয়। ভেতরে অবস্হানরত দোকানদারদের স্বইচ্ছায় ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে বলা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে দোকান পাট নিয়ে চলে যান তারা।
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবীগুলো যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন কলেজটির সাবেক শিক্ষার্থী ও রংপুরের সচেতন মহল। তারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সাথে একমত পোষণ করেন এবং দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কলেজ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ সোহেল সরকার কর্তৃক লন্ডন থেকে প্রকাশিত
সহ সম্পাদকঃ মোঃ শেখ ফরিদ বার্তা বিভাগঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
সাথী সোহেল জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন (আর্তমানবতার সেবায়) বিকাশঃ ০১৩০২৪৪৭৩৭৩