পত্রিকায় নিউজ প্রকাশের পর দৌড়ঝাপ, মিথ্যা প্রপাগান্ডায় প্রচারে ব্যস্ত ৭ প্রভাষক
স্টাফ রিপোর্টার:
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা কলেজের ৭ জন প্রভাষক কলেজের সভাপতি-ডিজি প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ নিয়ে এমপিওভুক্তকরনের মাধ্যমে ১৪ বছর যাবত চাকুরী করে যাচ্ছেন। প্রভাষকগন সরকারী কোষাগার থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ৫জন পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন। ১১ বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসন তদন্তে সত্যতা পেলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা যায়, ২০০৪ সালে ৫ মে বাহুকবা কলেজটি এমওিভুক্ত হলেও মাত্র ১৩ দিন পর ১৭ মে এমপিওভুক্ত বাতিল হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করলে হাইকোর্ট ২০০৭ সালে কলেজটির বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের এমপিওভুক্ত করনের নির্দেশসহ বেতনভাতা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেন। ২০০৮ সালের ২মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ক-৩) বেনজীর আহাম্মদ কলেজের অধ্যক্ষসহ ১৯ জন শিক্ষক/কর্মচারী ২০০০ সালে নিয়োগ পেলেও অভিজ্ঞতা, কাম্য যোগ্যতা, শিক্ষার্থী না থাকা ও বিধিসম্মত নিয়োগ না হওয়ায় তাদের এমপিওভুক্ত বাতিল করেন। ১৯ জনের মধ্যে ওই সময়ে অধ্যক্ষ শাহীন আখতার ১২ বছরের অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি চাকুরী ছেড়ে চলে যান। নিয়োগ বাতিল হলেও আব্দুল হালিম অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে আব্দুল হালিমসহ ৪ জন প্রভাষক যথাক্রমে-সমর কুমার মন্ডল, মিজানুর রহমান, বাচ্চু কুমার ঘোষ ও জুলফিকার আলী ভুট্টো মিলেমিশে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ওই সময়ের কলেজের সভাপতি, ডিজির প্রতিনিধি ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসহ সবার স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে ২০০৪ সালের ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে এবং হাইকোর্টসহ শিক্ষামন্ত্রনালয়ের নির্দেশনার তথ্য, ২০০০ সালের নিয়োগের তথ্য গোপন রেখে কাজগপত্র শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করেন। ভুয়া নিয়োগেই ২০১০ সালে এই ৫জন প্রভাষক এমপিওভুক্ত হন এবং সরকারী বেতন উত্তোলন শুরু করেন। একই ভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কলেজের সভাপতি, ডিজির প্রতিনিধি ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসহ সবার স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে ফারহানা আফরোজ ও বকুল খাতুনকে প্রভাষক পদে ২০০৫ সালে নিয়োগ দেন এবং এমপিওভুক্ত করেন। জাল-জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে ২০১০ সালের ১০নভেম্বর গভর্নিং বডির সভাপতি আমিনুল ইসলাম সাত্তার শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারী সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসককে তদন্ত পুর্বক মতামতসহ প্রেরনের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসন ১১ সালের ১১ জুলাই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম ও অভিযোগকারীকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত বক্তব্য প্রদান করতে বলেন। ওই সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম কলেজের সভাপতি আমিনুল ইসলাম সাত্তার ও ডিজির প্রতিনিধিসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষরসহ সকল জালিয়াতিসহ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ৫জনকে জাল নিয়োগ দেখিয়ে মন্ত্রনালয় প্রেরনপুর্বক এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেন। এছাড়া একই ভাবে ২০০৫ সালে ফারহানা আফরোজ ও বকুল খাতুনকে প্রভাষক পদে নিয়োগ জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন। তবে ওই সময় অজ্ঞাত কারনে তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। বিষয়টি অত্যন্ত কৌশলে ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে, শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে কলেজের প্রভাষক মোছা. আমেনা খানম (মনো বিজ্ঞান), প্রভাষক সমর কুমার মন্ডল (হিসাব বিজ্ঞাপন), মিজানুর রহমান (সাচিবিক বিদ্যা), বাচ্চু কুমার ঘোষ (জীব বিজ্ঞান), জুলফিকার আলী ভুট্টো ( ইসলামের ইতিহাসি), আব্দুল হালিম (ব্যবসায় উদ্যোগ) নিজেদের অবৈধ চাকুরী বাঁচাতো নানা কুটকৌশল দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ নামে একটি কলামে নিজেরাও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন অধ্যক্ষসহ ১৯জন শিক্ষক কর্মচারীর এমপিও ভুক্ত করা সম্ভব নয় বলে আপত্তি দেন শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ক-৩) বেনজীর আহমেদ। পরবর্তীতে আপত্তির স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বৈধভাবে এমপিওভুক্ত হন। কিন্তু তাদের আপত্তির স্বপক্ষের যৌক্তির পৃষ্ঠা পর্যবেক্ষন করে দেখা যায়, তারা আপত্তির উত্তলে উল্লেখ করেছেন তাদের নিয়োগ হয়েছে ২০০৪ সালে হয়েছে। যা সম্পুর্ন জালজালিতির মাধ্যমে করা হয়েছে। অথচ কলেজের অরজিনাল নথিপত্র দেখা যায়, তারা ২০০০ সালে নিয়োগ পেয়েছে। এছাড়াও প্রতিবাদটিতে কলেজের প্রভাষক আশুতোষকে নিয়েও নানা ধরনের মিথ্যাচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম সাত্তার জানান, সকলের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে নিয়োগ ও এমপিভুক্তিকরনের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির কাছে সাবেক তৎকালীন অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম নিজ হাতে লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মর্মে স্বীকার করে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। কিন্ত ১৩ বছর পার হলেও কেন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি তা বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে বর্তমান অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, যতদুর জানি এই ৭ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের এবং তদন্ত হয়েছে। তবে কি কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তা জানতে পারিনি।
তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম ওই ৭জনের পক্ষে জানান, কাগজ-পত্র সঠিক দেখানোর কারনেই মন্ত্রনালয় তাদের এমপিওভুক্ত করেছিল। তবে জেলা প্রশাসনের তদন্তে জাল-জালিয়াতি মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে স্বীকারের বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের সাথে পরে কথা বলব।
কলেজে তদন্তে এসে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (কলেজ-৩) আলমাছ উদ্দিন জানান, ৭ জন প্রভাষকের ভুয়া নিয়োগের মাধ্যমের এমপিভুক্তকরনের বিষয়টি জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ সোহেল সরকার কর্তৃক লন্ডন থেকে প্রকাশিত
সহ সম্পাদকঃ মোঃ শেখ ফরিদ বার্তা বিভাগঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
সাথী সোহেল জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন (আর্তমানবতার সেবায়) বিকাশঃ ০১৩০২৪৪৭৩৭৩