স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পূর্ব দিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের রোডে একটু এগোলে দক্ষিণ কোণায় দেখা যাবে একটি তিনকোনা জমি, যেখানে সাদা কাপড় দিয়ে বেড়া দেয়া আছে। দূর থেকে সাদা কাপড় মনে হলেও মূলত এটি হাসপাতালে ব্যবহৃত গজ; যা সাধারণত রোগীদের হাত-পা কেটে গেলে ব্যান্ডেজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
এই জমিকে কেন্দ্র করে এলাকায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে; ফলে প্রতিনিয়ত অনেকে সরেজমিনে এসে বিষয়টি দেখতে আসেন।
খোঁজখবর করে জানা যায়, এই জমিটির মালিক বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মরত কয়েকজন; যারা যৌথভাবে এই জায়গাটি ক্রয় করেছেন। এবং সেই জায়গার গঠিত কমিটির সভাপতি হিসেবে যাঁর নাম উঠেছে—ফার্মাসিস্ট মোঃ আনোয়ার হোসেন।
কে এই আনোয়ার হোসেন?
এই বিষয় নিয়ে তদন্ত শুরু করলে ধীরে ধীরে উঠে এসেছে অনেক অজানা তথ্য এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিগত দিনের অনিয়ম-দুর্নীতির কথা।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মোঃ আনোয়ার হোসেন গত এক যুগে 'আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ' হয়ে উঠেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা মন্ডলীর একজন প্রশস্ত প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। সেই প্রভাবেই করোনা মহামারীর সময় স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি করোনা ভ্যাকসিনের প্রশাসন ও ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের সনদ প্রদানের দায়িত্ব পান। তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী বিদেশগমনকারী প্রবাসীদের জন্য মডার্না ও ফাইজার-এর ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদ আবশ্যক ছিল; অন্য কোম্পানির ভ্যাকসিন সনদ হলে বিদেশগমন অনুপযুক্ত হতো। ওই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তিনি সময়ক্ষেপণ ও নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রতিটি বিদেশগামী ব্যক্তি থেকে ১০,০০০ — ২০,০০০ টাকা নিতেন বলে অভিযোগ আছে। বিভিন্ন সরকারি ও অর্ধ-সরকারি চাকরিজীবীর কাছ থেকে শারীরিক ফিটনেস সনদ দেওয়ার নামে ৫,০০০ — ১০,০০০ টাকা আদায় করতেন। এভাবে তিনি তৎকালীন সময়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে উঠেন। এছাড়া সরকারী সময়ে কিছু অনৈতিক সুবিধা ভোগ এবং সহকর্মীদের প্রতি খারাপ আচরণ ও হুমকি-ধামকির কথাও উঠেছে। জানা যায়, স্থানীয় এমপি ডাঃ মোস্তফা আলম নান্নু নির্বাচনী প্রচারণা-প্রচারের ভিডিও ও ছবি নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করতেন এবং এ প্রচারণার জন্য কলিগদের কাছ থেকে তুলনামূলক বড় অঙ্কের অর্থ আদায় করা হত—এবং এ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
এক সময় তিনি তিনমাথা রেলগেটের দক্ষিণ পাশে একটি ভবনে মানুষের সামনে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে প্রচার করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রোগী দেখাতেন; যা সম্পূর্ণ বেআইনি ব্যবস্থা ছিল। পরে চাপ পড়ায় ওই সাইনবোর্ড খুলে রাখতে বাধ্য হন তিনি।
তদন্তে আরও জানা যায়, বর্তমানে তিনি লিলেন ও যন্ত্রপাতি দোকানে কর্মরত আছেন। ছিলেন ছিলিমপুর মৌজায় ২টি প্লট ক্রয় করেছেন এবং গ্রামে বাড়ি ও জমি গড়েছেন। ছিলিমপুর মৌজার ১টি জমি মেডিকেল সংলগ্ন; এটি ৮ জন মিলে ক্রয় করেছেন এবং জমির মালিকদের কমিটির সভাপতি তিনি।
বর্তমানে ওই জমিটিতে হাসপাতালে সাধারণ গরিব-অসহায়দের জন্য বরাদ্দকৃত গজ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করে বেড়া দেয়া আছে। এ কারণে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, সরকারি গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে সেখানে ঘিরে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য, যেখানে রোগীরা হাসপাতালে গজ পায় না—তাদেরকে বাইরে থেকে কিনতে বলা হয়; সেখানে হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ক্ষমতা অপব্যবহার করে ওই গজ ব্যক্তিগত জমিতে নিয়ে এসে বেড়া বানিয়ে ব্যবহার করছেন; যা দুঃখজনক এবং হাসপাতালের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
গোপনে মেডিকেলের কিছু কর্মচারীর সাথে কথা হলে তারা জানান, হাসপাতালের কোন সরঞ্জাম বা উপকরণ নষ্ট হয়ে গেলে তা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা যাবে না; তা অফিসে জমা দিতে হয়।
সরকারি গজ ব্যক্তিগত জমিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও মোঃ আনোয়ার হোসেন এখনও শজিমেক হাসপাতালে বহালতাবীয়ভাবে কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় লোকজন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মনে করেন—যদি কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনৈতিক কর্মচারীরা সরকারি সম্পত্তি অপব্যবহারের চেষ্টা করবে। তাই তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ সোহেল সরকার কর্তৃক লন্ডন থেকে প্রকাশিত
সহ সম্পাদকঃ মোঃ শেখ ফরিদ বার্তা বিভাগঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
সহকারী বার্তা সম্পাদক বি এম আবুল হাসনাত