জয়পুরহাটে প্রতিবন্ধী আনোয়ার হাঁস পালনে সফল,স্বপ্ন বড় উদ্যোক্তা হবার। হাঁস পালনে সফল হয়েছেন প্রতিবন্ধী আনোয়ার। এখন স্বপ্ন বুনছেন বড় উদ্যোক্তা হবার। যেখানে সম্ভব হবে বেকারত্ব দূর করা আর তৈরী হবে কর্মসংস্থান ।
সরেজমিন জানা গেছে, আনোয়ার পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। অভাব অনটনে সংসার চলতো তার।আনোয়ার বিয়ের কিছুদিন পর যখন সংসার চালাতে যখন নাজেহাল তখন তার বাবা তাকে খরচের জন্য কিছু টাকা দেয়।বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে সে টাকায়-২০০৪ সালে মাত্র ৮ টি হাঁস নিয়ে শুরু করেন লালন পালন।সময় পেরিয়ে হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। সে ডিম থেকেই শুরু করেন বাচ্চা ফুটানো।ধীরে ধীরে বেরে যায় খামারের পরিধী। আর বাড়তে থাকে আয় রোজগারও।এভাবেই বুকভরা ছোট্ট স্বপ্ন নিয়ে আনোয়ার আজ পেশা হাঁস খামারী। এখন তার স্বপ্ন অনেক বড়।তিনি হতে অনেক চান বড় উদ্যোক্তা।
জেলার কালাই উপজেলার আঁওড়া গ্রামের তসকিন উদ্দিন ধলুর ছেলে এই আনোয়ার। তার জন্ম উপজেলার পুর গ্রামে হলেও তার বেড়ে ওঠা মামার বাড়ি আঁওড়া সোনাপাড়া গ্রামে।রাজমিস্ত্রীর কাজের পাশাপাশি আনোয়ার দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এই খামার। ২০১১ সালে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে পা ভেঙে যায়। চিকিৎসা করেও ঠিক মতো হাটতে পারেন না আনোয়ার হয়ে যান প্রতিবন্ধী। সাংসার চালানোর এক মাত্র ভরসা ছিলেন আনোয়ার।ফলে তার সংসারে নেমে আসে দারিদ্রতার আঁধার।শত কষ্টে স্ত্রী মর্জিনাকে সাথে নিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা আর বিরামহীনপরিশ্রমে ঘুরে দাঁড়ায় আনোয়ার।এ খামারের বেশিরভাগ হাঁস প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই দ্রুত বড় হয়।এতে কম খরচে লাভ হয় বেশী। চলতি বছর ৬৫-৭০ দিনে হাঁস পালনে ৩ লাখের বেশি টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
সাফল্যের কথা তুলে ধরে আনোয়ার বলেন,পা ভাঙ্গার পরে যখন সুস্থ হয় তখনোও সংসারে ছিলো টলমলে অবস্থা।এ সময় তার শ্যালিকা ৪০ টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করে।সেখান থেকে দেখেন আলোর মুখ, আয় হয় দশ হাজার টাকা।এরপর ধীরে ধীরে হাঁসের বেড়ে যায় সংখ্যা। অনেকেই আমাকে নিষেধ করলেও আমি থামিনী।
তিনি বলেন, বছরে এ সময় যখন মাঠ ফাঁকা থাকে তখন হাঁস পালন করলে খুব লাভবান হওয়া যায়। তখন হাঁসের চাহিদাও থাকে বেশি, দামও ভালো পাওয়া যায়।গেল বছর ১ হাজার ২শ বাচ্চা কেনা সহ ৯০ হাজার টাকা খরচ করে ৭০ দিনে লাভ হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অন্য কাজ করে এভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।ফলে এ বছর খাকি ক্যাম্বেল বাচ্চা তুলেছি ২ হাজার ৮শ। এর মধ্যে বিক্রি করেছি ৩ লাখ টাকা। খামারে যা আছে তাতে আরও ২ লক্ষ টাকা বিক্রি করার আশা করেন আনোয়ার ।
খামারী জানায়, ২ হাজার ৮ শ বাচ্চা লালন পালনে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ৬৫-৭০ দিনে একেকটি বাচ্চার ওজন হয়েছে ৮০০-১০০০ গ্রাম।বর্ষা মৌসুম হচ্ছে খাকি ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা লালন পালনের উত্তম সময়। এ সময় মাঠ-ঘাটে পানি থাকায় প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ান হয়। প্রতিবন্ধী হলেও অনেক কষ্টে খামারটিকে এ পর্যন্ত এনেছি। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে খামারটিকে আরো বড় করতে পারবো।আর বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।আমার খামারে কাজ করে অনেক যুবক বেকারত্ব দুর করতে পারবে ।
কালাই উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হাসান আলী জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ খামারিদের সরকারি যে সুবিধা আছে সেটা আমরা দিয়ে থাকি।ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট দেওয়ার সুযোগ হয়না। সরকার মাঝে মাঝে প্রণোদনা দেয় সেটা আমরা খামারিদের মাঝে বন্টন করে থাকি।রেজিস্ট্রেশন পাওয়া খামারি মালিক ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিতে চাইলে সুপারিশ করা হবে বলেও জানান কর্মকর্তা ।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ সোহেল সরকার কর্তৃক লন্ডন থেকে প্রকাশিত
সহ সম্পাদকঃ মোঃ শেখ ফরিদ বার্তা বিভাগঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
সহকারী বার্তা সম্পাদক বি এম আবুল হাসনাত